সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন
সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। সেই টুকরাগুলো পাঁচটি স্যুটকেসে ভরে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোববার তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি সাবাহ’ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে এর আগে খাসোগির লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
‘ডেইলি সাবাহ’র খবরে বলা হয়েছে, খাসোগির লাশের টুকরাগুলো স্যুটকেসে ভরে প্রথমে কনস্যুলেটের পাশের সৌদি কর্মকর্তাদের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ গায়েব করার দায়িত্বে ছিলেন ১৫ সদস্যের সৌদি কিলিং স্কোয়াডের অন্যতম তিন সদস্য মাহির মুতরিব, সালাহ তুবেগি ও তাহার আল হারবি।
সালাহ মুতরিব সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সহযোগী। আর সালাহ তুবেগি দেশটির সায়েন্টেফিক কাউন্সিল অব ফরেনসিকের প্রধান ছিলেন। তিনি সৌদি সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল। যুবরাজ সালমানের নিরাপত্তাকর্মী তাহার আল হারবি গত বছরের সৌদি রয়েল গার্ডে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট হন।
জামাল খাসোগির নিখোঁজ হওয়ার দিন মাহির মুতরিব ইস্তাম্বুল থেকে ব্যক্তিগত বিমানে করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। ওই বিমানে করেই খাসোগির লাশের টুকরাগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। মাহির মুতরিবের ব্যক্তিগত বিমানটি তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। সেদিন বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তাঁর ব্যাগ পরীক্ষা করতে দেননি তিনি। ব্যক্তিগত ওই বিমানটির কোনো ফ্লাইট শিডিউল, বিমান ও ফ্লাইটের কোনো তথ্যও তিনি বিমানবন্দরে রাখেননি। সেদিন কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী মুতরিবকে বিমানবন্দরে খুব দ্রুত চলাচল করতে দেখা যায়।
আল-জাজিরার সাংবাদিক অ্যান্ড্রু সিমনস বলেছে, এত কিছুর পরও কেউই জানেন না কোথায় জামাল খাসোগির লাশ নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, জামাল খাসোগির মরদেহ অ্যাসিডে ঝলসে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি কনসাল জেনারেলের বাসার আঙিনায় মরদেহ পুঁতে রাখা হয়েছে। তবে ঠিক কী হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়।
তুরস্ক আর সৌদি আরবের তদন্ত দল খাসোগি হত্যার ঘটনা তদন্ত করছে।
এর আগে খবরে বলা হয়েছিল, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করতে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড নিয়োগ দিয়েছিল সৌদি আরব। ওই সময় ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছিল, ওই আততায়ী দলে একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞও ছিলেন। তিনি হাড় কাটতে করাত সঙ্গে এনেছিলেন। করাত আনার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যার পর খাসোগির দেহ টুকরা টুকরা করা। ওই আততায়ী দলটি সিনেমা স্টাইলে খাসোগিকে হত্যা করে। দুই ঘণ্টার ভেতর মিশন শেষ করে তাঁরা তুরস্ক থেকে বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।
খাসোগি হত্যাকাণ্ডকে কোয়েন্টিন তারান্টিনো পরিচালিত হলিউডের সিনেমা পাল্প ফিকশনের সঙ্গে তুলনা করেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।
তুরস্কের ‘ডেইলি সাবাহ’ খাসোগির ‘হত্যাকাণ্ডে’ জড়িত সন্দেহে ওই আততায়ী দলের ১৫ জনের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে। দৈনিকটি বলছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটে প্রবেশের পর খাসোগিকে হত্যা করে ওই ব্যক্তিরা তুরস্ক ছেড়ে চলে যান। ওই ব্যক্তিরা দুটি ব্যক্তিগত বিমানে করে রিয়াদ থেকে ইস্তাম্বুলে আসেন।
২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদির কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন খাসোগি। ওই দিন ১৫ সৌদি নাগরিকও সেখানে প্রবেশ করেন। তাঁরা কনস্যুলেটে যাওয়ার আগে এর পাশের দুটি আন্তর্জাতিক হোটেলে ওঠেন। কনস্যুলেটের অপারেশন শেষ করে ওই দিনই তাঁরা তুরস্ক ত্যাগ করেন। তাঁদের বহনকারী ব্যক্তিগত দুটি বিমান কায়রো ও দুবাই হয়ে রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। খাসোগির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এসব সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ খুঁজছে বলেও সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে।
Leave a Reply