মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমানের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। রোববার (৪ নভেম্বর) বিকেলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে তার মরদেহ বহনকারী ফ্লাইট। আজ ফরিদপুরের আলীপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।

অধিদফতরের শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) চন্দ্র শেখর হালদার জানান, মহাপরিচালকের মরদেহ রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। বাদ এশা অধিদফতর প্রাঙ্গণে নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৯টার দিকে মাগুরার শ্রীপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে তার মরদেহ। আজ সকালে শ্রীপুর উপজেলার কাজলি স্কুল মাঠে দ্বিতীয় নামাযে জানাজা হবে। বেলা ১১টায় ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে তৃতীয় নামাযে জানাজা শেষে আলীপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শোকবার্তায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মরহুম মাহাবুবুর রহমান একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন। তার অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তার মৃত্যুতে শিক্ষা পরিবারের সবাই গভীরভাবে শোকাহত। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

মহাপরিচালকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাব্বির নেওয়াজ, স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদ, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ উপজেলা মাধ্যমিক অফিস কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ, শিক্ষক কর্মচারী সংগ্রাম কমিটি ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেলে প্রচণ্ড জ্বর হয় ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমানের। সেদিন রাতেই পরিস্থিতির অবনতি হলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএসএমইউ) ভর্তি করা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাউন্ট এলিজাবেথের আইসিইউতে ‘ইসিএমও’সহ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

এ বছরের ৭ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে যোগ দেন অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান। বিসিএস সপ্তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৮৫ সালে রাজেন্দ্র কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর সরকারি বিএম কলেজ ও শরীয়তপুরের একটি মহিলা কলেজ শিক্ষকতা করেন। পরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে উপাধ্যক্ষ এবং একই কলেজে পাঁচ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে ১৭ এপ্রিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৮ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৮২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

মৃতু্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।