সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাটখিলে খালে মিললো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া ৬১২ বুলেট মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে আড়াল করার জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত টেকনাফের করিম মেম্বার চাটখিলে ব্যবসায়িকে অপহরন-চাঁদা দাবি -থানায় মামলা চাটখিলের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামীলীগের ২৯ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অপারেশন ক্লিন লীগ’ ঘোষণার দাবি গণঅধিকার পরিষদ নেতার বন্যা দুর্গতদের মাঝে এন আর বি ব্যাংকের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চাটখিলে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র লীগের হামলার অভিযোগ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় পুলিশের এস আই ক্লোজড সোনাইমুড়ীতে মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে গুলি করে হত্যা
রোহিঙ্গা শিবিরে ‘ইঞ্জিলচুলা’ আতঙ্ক

রোহিঙ্গা শিবিরে ‘ইঞ্জিলচুলা’ আতঙ্ক

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে ‘ইঞ্জিলচুলা’ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ‘ইঞ্জিলচুলা’ বিস্ফোরিত হলে কিংবা চুলা থেকে ঘরে আগুন লাগলে তা পুরো শিবিরে ছড়িয়ে পড়বে। ১১ লাখ রোহিঙ্গার ৩০টি আশ্রয়শিবিরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দ্রুত পৌঁছার রাস্তাও নেই।

‘ইঞ্জিলচুলা’ হচ্ছে এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার। রোহিঙ্গারা গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলাকে বলে ‘ইঞ্জিলচুলা’। রোহিঙ্গারা যুগ যুগ ধরে জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি ব্যবহারে অভ্যস্ত। গত শুক্রবার দুপুরে উখিয়া ও টেকনাফের সাতটি আশ্রয়শিবির ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

রোহিঙ্গারা জানায়, শীত পড়তে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে আশ্রয়শিবির। রোহিঙ্গারা বর্ষার কয়েক মাস কাটিয়েছে পাহাড়ধস–আতঙ্কে। এখন দুশ্চিন্তার বড় কারণ শীতের আগুন। কারণ, আশ্রয়শিবিরের বসতিগুলো তৈরি হয়েছে বাঁশের খুঁটিতে পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে।

রোহিঙ্গাদের দাবি, বিদেশি একাধিক সংস্থা ঘরে ঘরে বিনা মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা সরবরাহ করলেও ব্যবহার জানে না কেউ। সম্প্রতি কয়েকটি ঘরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করে বিক্রি করে দিচ্ছে।

বন বিভাগ, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কার্যালয় সূত্র জানায়, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবারে গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা সরবরাহ করেছে। রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ১ লাখ রোহিঙ্গা পরিবারে গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা বিতরণের কাজ চলছে। বর্তমানে টেকনাফ ও উখিয়ার ৩০টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় ২ লাখ পরিবারে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪ জন। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সময়ে ৯৫ হাজার পরিবারকে প্রতি মাসে ১৯ কেজি করে চালের কুঁড়া দিয়ে তৈরি জ্বালানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও বন উজাড় বন্ধ হচ্ছে না।

ঘরে ঘরে আতঙ্ক
গত শুক্রবার দুপুর ১২টায় উখিয়ার কুতুপালং ডি-৫ আশ্রয়শিবিরে ৮ বর্গফুটের একটি ত্রিপলের ঝুপড়িঘরে গিয়ে দেখা গেছে, সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে ভাত রান্না করছেন আরেফা বেগম। পাশেই দাঁড়িয়ে ছেলে সলিমউল্লাহ (১৩) ও মেয়ে সলিমা (৭)। আরেফার বাড়ি রাখাইন রাজ্যের বলীবাজারে। তিনি বলেন, ‘সারা জীবন কাঠ দিয়ে রান্না করেছি। এখানে ইঞ্জিলচুলায় করতে হচ্ছে। কখন বিস্ফোরণ ঘটে, সেই আতঙ্কে থাকি।’ ইতিমধ্যে কয়েকটি ঘরে এই চুলা বিস্ফোরিত হয়ে নারী–শিশু আহত হয়েছে।

পাশের জুমশিয়া শিবিরের কয়েকটি ঘরে দেখা গেছে, গ্যাসের চুলা বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা নারীরা জ্বালানি কাঠ দিয়ে রান্না করছেন। কারণ জানতে চাইলে মঞ্জুমা বেগম বলেন, ইঞ্জিলচুলা ব্যবহারে ভয় আছে।

উখিয়ার বালুখালী, মধুরছড়া, ময়নারঘোনা, হাকিমপাড়া, টেকনাফের শালবন আশ্রয়শিবির ঘুরেও একই অবস্থা দেখা গেছে। শীত মৌসুমে গরম কাপড়চোপড়ের সংকটের পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রোহিঙ্গারা বেশি উদ্বিগ্ন।

গত ১৬ অক্টোবর রাতে টেকনাফের শালবন আশ্রয়শিবিরের এ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউনুসের ঝুপড়িঘরে বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে মোহাম্মদ ইউনুস (২৯), তাঁর স্ত্রী শওকত আরা বেগম (২২) ও ছেলে এহসান (২) গুরুতর আহত হয়।

গত ১৮ জুলাই উখিয়ার থাইংখালীর আশ্রয়শিবিরের বি-১৩ ব্লকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনটি বসতি পুড়ে যায়। এ সময় ধলুবিবি (৪৫), জুলেখা বিবি (৫৫), অলী আহমদ (৪০), মো. রায়হান (৩০) ও আমান উল্লাহ (২৩) আহত হন। ওই সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, শিবিরগুলোতে ত্রিপলের বসতি তৈরি হয়েছে একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। সিগারেট অথবা রান্নাঘরের আগুন কোনো একটি ঘরে লাগলে তা মুহূর্তে পুরো শিবিরে ছড়িয়ে পড়বে। তখন আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, দুর্গম পাহাড়ের শিবিরগুলোতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা ফায়ার সার্ভিসের জন্যও দুরূহ ব্যাপার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 dailychatkhilkhobor.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com