সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাটখিলে খালে মিললো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া ৬১২ বুলেট মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে আড়াল করার জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত টেকনাফের করিম মেম্বার চাটখিলে ব্যবসায়িকে অপহরন-চাঁদা দাবি -থানায় মামলা চাটখিলের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামীলীগের ২৯ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অপারেশন ক্লিন লীগ’ ঘোষণার দাবি গণঅধিকার পরিষদ নেতার বন্যা দুর্গতদের মাঝে এন আর বি ব্যাংকের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চাটখিলে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র লীগের হামলার অভিযোগ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় পুলিশের এস আই ক্লোজড সোনাইমুড়ীতে মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে গুলি করে হত্যা
‘চক্রে’র শক্তিতে বলীয়ান অধ্যক্ষ

‘চক্রে’র শক্তিতে বলীয়ান অধ্যক্ষ

  • সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক
  • ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, আর্থিক দুর্নীতি এবং নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলা মামলায় তিন দফা কারাভোগ করেন
  • চক্রে রয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন

সিরাজ উদ দৌলাফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, আর্থিক দুর্নীতি এবং নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলা মামলায় তিনি তিন দফা কারাভোগ করেন। কিন্তু কেউ টুঁ শব্দটি করতে পারতেন না তাঁর বিরুদ্ধে। স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী একটি বলয় তৈরি করে মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ শক্তভাবে নিজের হাতে রাখেন অধ্যক্ষ। আর এই চক্রে রয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। দুই দিনের অনুসন্ধানে এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে।

সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে, আলোচিত চক্রের মধ্যে নিহত নুসরাত জাহান রাফির ভাইয়ের মামলায় আসামি হন পাঁচজন। তাঁরা হলেন আফছার উদ্দিন, মাকসুদ আলম, আবদুল কাদের, নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম। পুলিশ অভিযান চালিয়ে শুধু আফছার উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। বাকি সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, মাকসুদ আলম সোনাগাজী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তিনি মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। অধ্যক্ষ সিরাজকে সব সময় সহায়তা দেন তিনি। গত ২৭ মার্চ অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচিতে নামলে তিনি অধ্যক্ষের অনুগত লোকদের নিয়ে বাধা দেন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। ফলে এ ঘটনায় সোনাগাজী সদরে আর কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি।

আর নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন দুজনই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। অধ্যক্ষের যেকোনো অপকর্মের দোসর তাঁরা। নুসরাতকে ২০১৭ সালে একবার চুন নিক্ষেপ করেন নুর উদ্দিন।

তাঁরা কেউই এখন এলাকায় নেই। বন্ধ রয়েছে মুঠোফোন। অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সোনাগাজী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসার দোকানপাট ভাড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হয়। আয়ের একটি অংশ অধ্যক্ষ তাঁর অনুগত লোকজনের জন্য খরচ করেন। এঁদের সংখ্যা ১০ থেকে ১২। তাঁদের মধ্যে নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই ছাত্রীর ওপর হামলাকারী বোরকা পরা চারজনের পরিচয় মিলবে।

যেভাবে চাপা পড়ে ৩ অক্টোবরের ঘটনা

মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৩ অক্টোবর অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা আলিম শ্রেণির আরেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেন। প্রতিকার চেয়ে মেয়েটির বাবা মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। চিঠির অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছেও দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং যে তিনজন শিক্ষক অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, তাঁদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেন অধ্যক্ষ। ওই তিন শিক্ষক হলেন আরবি বিভাগের প্রভাষক আবুল কাশেম এবং জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বেলায়েত হোসেন ও হাসান আহমেদ। অধ্যক্ষের রোষানলে পড়ে তিনজনই কোণঠাসা হয়ে যান।

আবুল কাশেম গতকাল বুধবার মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যক্ষকে কোনো বিষয়ে পরামর্শ দিলে কিংবা শোধরাতে বললে রোষানলে পড়তে হয়। গত বছরের অক্টোবরে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। মাদ্রাসার ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে অধ্যক্ষের কাছে তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকদের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন, যার মধ্যে আমিও আছি।’

আবুল কাশেম আরও বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা বাইরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। এ জন্য কেউ তাঁর অপকর্মের কথা বলতে সাহস পান না। এর ফলে অক্টোবরের শ্লীলতাহানির ঘটনাটিও চাপা পড়ে যায়। এর কারণেই তিনি আরেকটি মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করার সাহস পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ইউএনও মো. সোহেল পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যক্ষের চরিত্র নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠে আসছে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

যা দেখেছিলেন নৈশপ্রহরী
৬ এপ্রিল অগ্নিদগ্ধ ছাত্রী নুসরাতকে উদ্ধার করতে আসা দুজনের একজন হলেন মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফা। পুলিশের একজন সদস্যকে নিয়ে ওই মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন মোস্তফা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা পরপর দুটি শ্লীলতাহানির ঘটনায় ধরা পড়েছেন। এর আগেও নিজ দপ্তরে তাঁকে একাধিকবার মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছি। দেখে ফেলায় তিনি আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “পাথরের সঙ্গে কপাল ঠুকলে মাথা ফাটবে, নাকি পাথর ফাটবে?” আমি বলেছিলাম মাথাই ফাটবে।’

মোস্তফা আরও বলেন, ‘অধ্যক্ষের দপ্তর ছিল নিচতলায়। মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনা একাধিকবার আমার চোখে পড়েছে। তখন “সাপ ঢুকেছে, নিচতলার দপ্তর নিরাপদ নয়”বলে পাশের ভবনের দ্বিতীয় তলায় তিনি দপ্তর স্থানান্তর করেন।’

আগের মামলা ও কারাদণ্ড
ফেনীতে উম্মুল কুরা ডেভেলপার্স নামের একটি কথিত সমবায় প্রতিষ্ঠান আছে। অধ্যক্ষ সিরাজ এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে জমা পাওয়া টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় চেক প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার টাকার মামলা হয়। এ বিষয়ে আদালতে দায়ের হওয়া মামলায় (সিআর ৯৪/১৮ নম্বর) আদালত গত বছরের ১০ জুলাই তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। পরে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে মাদ্রাসা তহবিলের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

২০১৪ সালে নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় সিরাজ উদ দৌলা ২০১৭ সালে কারাভোগ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 dailychatkhilkhobor.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com