সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি : নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা। এতে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাছাড়া আরো করুন অবস্থায় রয়েছে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে এবং গত ডিসেম্বর মাসে এটিকে মডেল হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ডাক্তার সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা বিরাজ করছে। এখানে ২৩ জন ডাক্তারের স্থলে ১০ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। কর্মরত ডাক্তাররা নিয়মিত হাসপাতালে না এসে অলিখিত সমঝোতার মাধ্যমে একেক জন সপ্তাহে ২/৩ দিনের বেশি অফিস করেন না। একদিন এসে কয়েকদিনের হাজিরা দিয়ে থাকেন। তাও অফিসের নির্ধারিত সময়ে না এসে দায় সারা ভাবে রোগী দেখে ২/৩ ঘন্টা পর চলে যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে প্রেরণ করে থাকে। হাসপাতালের প্রধান এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ খন্দকার মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে সহকারীদের সাথে সমন্বয় না করে নিজের একক সিদ্ধান্তে হাসপাতাল পরিচালনা, উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কমিটির নিয়মিত সভা না করা, কর্মরতদের সাথে দুর্ব্যবহার, হাসপাতালে প্রতিনিয়ত ডিউটি না করে রামগঞ্জের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার অপারেশন সহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধ সরবরাহ করাও বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক খরচ এবং হাসপাতালের মাতৃসেবা বিএসএস প্রকল্প ও বিভিন্ন বরাদ্ধের অর্থ এককভাবে খরচ করে দুর্নীতি করা সহ তার বিরুদ্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে সহকারীদের সাথে তার মনোমালিন্ন ও বিরোধ দেখা দেওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম আরো মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নাম না প্রকাশ করা শর্তে ১ জন কর্মকর্তা ও ১ জন কর্মচারী। তাছাড়া সরকারী ভাবে সিজার অপারেশন করার জন্য তাকে ইওসি প্রশিক্ষণ করানো হলেও তিনি চাটখিল হাসপাতালে এ কাজ করাচ্ছেন নার্সদের দিয়ে। অফিসের প্রয়োজনে রামগঞ্জ থেকে এখানে এসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে ২/৩ ঘন্টা পরে চলে যান।
রোগী ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রোববার ও মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা টিকেট নিয়ে দেড় থেকে ২ ঘন্টা ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে আছেন। মেডিকেল অফিসারদের ৪,৫,২৪,২৫,২৬,৩১,৩৪নং রুম খোলা রয়েছে। কিন্তু একজন ডাক্তারও তখনো আসেন নি। রোগীরা ঘোরাঘুরি করছে। জরুরী বিভাগে রয়েছেন একজন স্বাস্থ্য সহকারী, ডাক্তার নেই। এখানে প্রয়োজন হলে ডাক্তার ডেকে আনা হয় বলে জানানো হয়। এজন্য চিকিৎসা নিতে ২ থেকে ৫ শত টাকা দিতে হয়। চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তারের অপেক্ষা বসে থাকা রহমত উল্লাহ, আমিনা বেগম জানান, তারা সকাল ৯টা বাজে এসে বসে আছে। এখন সকাল সাড়ে ১০টা বাজে, অথচ ডাক্তার আসে নাই। তাছাড়া এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীরা অধিকাংশ ঔষধ বাহির থেকে ক্রয় করতে হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকলেও ডাক্তাররা বাহিরের হাসপাতালে রোগীদের পাঠিয়ে দিচ্ছে এগুলো করার জন্য কমিশন লাভের আশায়। ওয়ার্ড গুলোতে নোংরা ও দূর্গন্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। টয়লেট গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। রোগীদের বিচানাপত্র নিয়মিত পরিবর্তন করা হয় না এবং প্রতিনিয়ত ধোয়া-মোছা হয় না। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে গেলে ভূতড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। অথচ এখানে জেনারেটর রয়েছে যা ব্যবহার করা হয় না। ডাক্তার ওয়ার্ডে নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন না। অনেক সময় জরুরী বিভাগ সহ অন্যান বিভাগে আসা রোগীদের ভর্তি অথবা চিকিৎসা না করে চাটখিল ও নোয়াখালী প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে প্রেরণ করার অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার সপ্তাহে ২/১ বার গিয়ে অফিসিয়াল কাজ সেরে আবার চলে আসেন। মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্টরা এগুলো চালান তাদের ইচ্ছামত। কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরতগণ স্থানীয় হওয়ায় তারা সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তাদের ইচ্ছামত পরিচালনা করে। নার্সদের দৌরত্ব চরমে। এরা ডাক্তার ও রোগীদের সাথে অহরহ দুর্ব্যবহার করে আসছে। কয়েকজন নার্স এখানে ২০/২৫ বছর যাবৎ কর্মরত থাকায় এরা কাউকে পরোয়া না করা সহ অনেক অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন দুনীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে হাসপাতাল প্রধান এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ খন্দকার মোস্তাক আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এসব বিষয়ে কোন সদ উত্তর না দিয়ে তার অফিসে গিয়ে তার সাথে যোগযোগ করার জন্য বলেন।
Leave a Reply