সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: মিনিস্ট্রি অডিটের নামে নোয়াখালী জেলার চাটখিলের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের হুমকি প্রদান, তাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করা সহ মাতৃত্ব ছুটি ভোগকারীনি গর্ভবতী শিক্ষিকাকে রাত ১২টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে তাছাড়া প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের ১ মাসের বেতন তুলে ঢাকায় দিয়ে আসার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে পরিদর্শক মোঃ আলমগীর হাসানের বিরুদ্ধে। তার এসব কর্মকান্ডে শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে তার চাহিত ঘুষের টাকা না দিলে উল্টা-পাল্টা রিপোর্ট দিয়ে চাকরির ক্ষতি করতে পারে এ আশংকায় হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় আতংকে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীগণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ থেকে ১৩ মে চাটখিলের ভীমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, ছয়ানী টবগা আজম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁচগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কড়িহাটি উচ্চ বিদ্যালয়, কেশুরবাগ দাখিল মাদ্রাসা, মোহাম্মদপুর আনোয়ার আলী মাদ্রাসা, হীরাপুর আলীম মাদ্রাসা, ইসলামপুর দাখিল মাদ্রাসায় মন্ত্রণালয়ের অডিট করেন পরিদর্শক আলমগীর হাসান। তিনি সকাল ৮টা থেকে টানা রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যালয় সমূহ অডিট করেন, এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীগণকে তাদের চাকরির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বসিয়ে রাখেন। ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (কৃষি) সালমা আক্তার তিনি মাতৃত্ব ছুটি নিয়ে গর্ভাবস্থায় ছুটিতে থাকলেও তাকে ডেকে এনে রাত ১২টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র তল্লাশীর নামে পবিত্র রমজানে তাদেরকে ব্যাপকভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের কাগজপত্র নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে গেছেন।
আসার সময় ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাতেনকে প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারী থেকে ১ মাসের বেতনের টাকা তুলে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার মৌখিক নির্দেশ দিয়ে চাটখিল ত্যাগ করেন। আব্দুল বাতেন এ টাকা উত্তোলনের জন্য সকলের সাথে যোগাযোগ শুরু করলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং শিক্ষক কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। টাকা না দিলে চাকরীর ক্ষতি হতে পারে এ আশংকায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তারা। পরিদর্শক আলমগীর হাসান চাটখিল জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় থাকা অবস্থায় হোটেলের কোন খাবার খাননি। তিনি তার ইচ্ছামত মেনু লিখে প্রধান শিক্ষকদের হাতে দিতেন। প্রধান শিক্ষকগণ তাদের বাড়ি থেকে এ খাবার পাক করে এনে তাকে আপ্যায়ন করেছেন। তাছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় তিনি এসি হাইস মাইক্রোবাস ব্যবহার করেছেন। এর ব্যয় বহন করতে হয়েছে বিদ্যালয়গুলোকে। মোহাম্মদপুর আনোয়ার আলী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও: নুর মোহাম্মদ জানান, সকল কথায় কান দিতে নাই। তার নিকট আব্দুল বাতেন টাকা চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনি কোন টাকা দিবেন না। যদি তার প্রতিষ্ঠান অথবা শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক প্রতিবেদন দেওয়া হয় পরে তিনি এ ব্যাপারে দেখবেন। প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর ১ মাসের বেতন চাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানের এবং নিজের নাম না জানানোর শর্তে আরো ৬ প্রতিষ্ঠানের প্রধান। রোজা রাখেন এবং নিয়মিত নামাজ পড়েন এমন ৪ জন শিক্ষক কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন অডিটের নাম করে তাদেরকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদেরকে ইফতার ও তারাবীর নামাযের সময়ও দেওয়া হয়নি। ভীমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বাতেন এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি। বর্তমানে অডিট হওয়া এ ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে মনগড়া উল্টা-পাল্টা প্রতিবেদন দেওয়ার শংকা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের আংশিক সত্যতা স্বীকার করে ঘুষ দাবীর বিষয়টি অস্বীকার করেন।
Leave a Reply