সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
চাটখিল (নোয়াখালী) সংবাদদাতা : নোয়াখালী জেলার চাটখিলের খিলপাড়া সাব পোষ্ট অফিসে গ্রাহকদের সঞ্চয়ের বিভিন্ন স্কীমে জমা দেওয়া প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সাব পোষ্ট মাষ্টার নুর করিমের বিরুদ্ধে। এজন্য নূর করিমকে খিলপাড়া থেকে ডিভিশনাল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে গ্রাহকগণ পোষ্ট অফিসে এসে ভীড় জমাচ্ছে। তাদের গচ্ছিত টাকার অফিসে কোন রেকর্ড না থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাব পোষ্টমাষ্টার নূর করিম কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশে প্রভাবশালী ২/১ ব্যাক্তির নাম ব্যবহার করে সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গত ১০ বছর থেকে খিলপাড়া সাব পোষ্ট অফিসে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে কিছুদিনের জন্য কড়িহাটিতে বদলী হলেও তিনি সেখানে না গিয়ে খিলপাড়ায় ডেপুটেশনে কাজ করে। পরে আবার খিলপাড়ায় বদলী হয়। এ সময় ৫ শতাধিক ডাক বিভাগের পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, মেয়াদী সঞ্চয়পত্র, এফডি, ডিপিএস সহ প্রায় ১০ কোটি টাকা তার মাধ্যমে পোষ্ট অফিসে জমা রাখেন। পোষ্ট মাস্টার ন্রু করিম অতি কৌশলে ডাক বিভাগের রেজিষ্টারে গ্রাহকের নাম ও টাকা জমা না দিয়ে, জমার পাশ বই ইস্যু না করে সাদা কাগজে টাকার পরিমান লিখে ব্যক্তিগত সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে রিসিট প্রদান করেন, আবার কখনও পাশ বই দিয়েছেন কিন্তু রেজিষ্টারে কোন রেকর্ড করেন নাই। এভাবে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তিনি এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আবার রেজিষ্ট্রারে অনেকের নাম ও জমার তারিখেও ভুল রয়েছে।
সম্প্রতি নুর করিমকে ছাতারপাইয়া পোস্ট অফিসে বদলী করলে তিনি সেখানে যেতে গড়িমাসি করায় কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে তার এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক পোষ্টমাষ্টার এর দেয়া কাগজপত্র নিয়ে এসে পোস্ট অফিসে ভীড় জমাচ্ছেন। কিন্তু রেজিষ্ট্রারে তাদের কোন রেকর্ড পাচ্ছেন না। খিলপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী নুর আলমের ২০ লাখ, খিলপাড়া গ্রামের কামরুল আহসানের ৪৫ লাখ, সাধন চন্দ্র মালাকারের ৩৫ লাখ, নূর হোসেনের ১০ লাখ, শিউলী রানী পালের ৫ লাখ, দেবব্রত পালের ২ লাখ, শংকরপুর গ্রামের কোহিনুর বেগমের ৫ লাখ সহ ৫ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১০ কোটি টাকার কোন হদিস নাই। এই টাকা সম্পূর্নরুপে পোষ্ট মাস্টার নুর করিম আত্মসাৎ করেছেন। পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে সাধন চন্দ্র মালাকারের ৩৫ লাখ টাকার কোন হদিস না পেয়ে তিনি এখন বাকরুদ্ধ। এভাবে আরো অনেকেই। বর্তমানে নুর করিমকে বিভাগীয় অফিসে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নুর করিম টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনি এ টাকা দিয়ে তার ছেলে ও ভাতিজাকে আমেরিকায় পাঠিয়েছেন, এলাকায় কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি ক্রয় করেছেন, কয়েকটি সি এন জি কিনে ভাড়া দিয়েছেন। গত কয়দিনে কয়েকজন গ্রাহককে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। কয়জন গ্রাহক জানান তাদের নিকট পাশ বই আছে পোষ্ট মাষ্টার সিল ও স্বাক্ষর করা টাকা আদায়ের ডকুমেন্ট আছে এটা রেজিষ্টারে আছে কি নাই তা তাদের দেখার বিষয় নয়, এটি ডাক বিভাগের ব্যাপার। তারা তাদের গচ্ছিত টাকা না পেলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। ইতিমধ্যে তারা বৈঠক করেছেন।
জেলার ডিপিএমজি মনিরুজ্জামান, জোনাল ইন্সপেক্টর হামিদ আলীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে পরিদর্শন করে অফিসের অনেক কাগজপত্র জব্দ করেছেন। জোনাল ইন্সপেক্টর হামিদ আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নূর করিমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে যাচাই বাচাই চলছে, হিসাবেও গড়মিল আছে। তদন্ত চুড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি। জেলার ডেপুটি পোষ্টমাষ্টার জেনারেল মনিরুজ্জামান জানান, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তদন্তসাপেক্ষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply