সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন
গুলজার হোসেন সৈকত, চাটখিল (নোয়াখালী): চাটখিল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাটখিল পি.জি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত কয়েক বছর ধরে সঠিকভাবে পাঠদান না চললেও আর্থিক বাণিজ্য চলছে জমজমাট। বিনা রশিদে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বছরে ৩/৪ মাস পাঠদান চললেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন ভাতা নেওয়া হচ্ছে ১২ মাসের। বিদ্যালয়ের এইসব অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখার মতো কেউ নেই। এতে করে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করলেও তারা নিরবে তা সহ্য করে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয় অফিস সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান, সহ-প্রধান ও হেড মাওলানা সহ মোট ২৮ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও বিদ্যালয়ের মোট ৬৭৫ জন ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন শিক্ষক এবং ৪ জন গেস্ট টিচার। প্রধান শিক্ষক সহ ১৭ জনের পদ শূন্য রয়েছে। এতে করে পাঠদানে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে প্রতি বছর জে.এস.সি, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষা কেন্দ্র থাকায় এইসব পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পাঠদান বন্ধ থাকে। উপজেলায় একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ার কারণে চাটখিল উপজেলার এবং এর বাহিরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেধাবী সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী প্রতি বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সরকারি নীতিমালা অনুসারে এদের মধ্য থেকে ১২০ জনকে ভর্তি করা হয়। এরা মেধাবী হলেও যথাযথভাবে পাঠদানের অভাবে জে.এস.সি ও এস.এস.সি পরীক্ষায় কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারে না। বছরের অধিকাংশ সময়ে পাঠদান বন্ধ থাকার সুযোগে কতিপয় শিক্ষকের প্রাইভেট বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠে। গরিব ও অসহায় অভিভাবকদের পক্ষে এত বেশি টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ানো সম্ভব হয় না। প্রাইভেটের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, বছরের শুরুতে সেশন চার্জ, গেস্ট টিচারের ফি, উন্নয়ন ফি’র কথা বলে বিনা রশিদে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার ৭ শত টাকা করে আদায় করা হয়। এছাড়া সারা বছরে ৩/৪ মাস স্কুল খোলা থাকলেও প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৭৫ টাকা হারে ১২ মাসে ৯ শত টাকা টিফিন চার্জ আদায় করা হয়, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুকুন উদ্দিনের সঙ্গে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তিনি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই সময়ে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। তবে তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয় ছুটি হলে বিদ্যালয়ের গেইটে এবং বিদ্যালয়ে আসাÑযাওয়ার পথে বখাটে ছেলেরা ছাত্রীদের উত্যক্ত করে থাকে। তিনি এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply