সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাটখিলে খালে মিললো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া ৬১২ বুলেট মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে আড়াল করার জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত টেকনাফের করিম মেম্বার চাটখিলে ব্যবসায়িকে অপহরন-চাঁদা দাবি -থানায় মামলা চাটখিলের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামীলীগের ২৯ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অপারেশন ক্লিন লীগ’ ঘোষণার দাবি গণঅধিকার পরিষদ নেতার বন্যা দুর্গতদের মাঝে এন আর বি ব্যাংকের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চাটখিলে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র লীগের হামলার অভিযোগ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় পুলিশের এস আই ক্লোজড সোনাইমুড়ীতে মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে গুলি করে হত্যা
শতকোটি টাকার সম্পত্তির লোভে স্বজনদের হাতে খু’ন হলেন প্রবাসী

শতকোটি টাকার সম্পত্তির লোভে স্বজনদের হাতে খু’ন হলেন প্রবাসী

গুলজার হোসেন সৈকত, চাটখিল (নোয়াখালী):

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সানোখালি গ্রামে প্রবাসী মো. গোফরান মিয়াকে নিজ বাড়ির ছাদে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চাটখিল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহতের বড় ছেলে মো. শাহজামাল মানিক বাদী হয়ে চাটখিল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এতে সানোখালি গ্রামের হাবিব উল্যাহর ছেলে মো. আবুল হাসেমকে প্রধান আসামি করে নয়জনের নাম উল্লেখ এবং চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অপর আসামিরা হলেন- সানোখালি গ্রামের রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবাল, মো. জনি, মো. জিয়াউল করিম রিপন, দিদার হোসেন, নুপুর বেগম, টুনি বেগম ও মধ্য বদলকোট গ্রামের ঠাকুরবাড়ির কেরাম আলীর ছেলে মাসুদ আলম।

এ ঘটনায় নোয়াখালী পিবিআই ও চাটখিল থানা-পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ময়নাতদন্ত ও জানাজা শেষে গতকাল মঙ্গলবার তার মরদেহ দাফন করা হয়।

এর আগে ১৬ অক্টোবর সকালে প্রবাসী আবদুল গোফরানের দুইতলা ভবনের ছাদ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

থানায় দায়ের করা অভিযোগ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গোফরান মিয়া সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি গত ১০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকার রামপুরার বনশ্রীর বাড়িতে আসেন।

নিহতের ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মানিক, নুর আলম, মেয়ে শোভা, বিজলি জানান, বাবার(গোফরান মিয়া) ঢাকা ও নোয়াখালীর চাটখিলে প্রায় শত কোটি টাকার বাড়ি-সম্পত্তি রয়েছে। তাদের অনুপস্থিতিতে গোফরান মিয়ার স্বজন আবুল হাসেম, রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবাল, মো. জনি, জিয়াউল করিম রিপন, দিদার হোসেন, মাসুদ আলমকে ঢাকা ও চাটখিলের সম্পত্তি-বাড়ি দেখাশোনা ও ভোগ দখলের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তারা লোভের বশবর্তী হয়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার পায়তারা শুরু করেন।

২০১৮ সালে গোফরান মিয়া সম্পত্তি ও বাড়ির আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে অভিযুক্তরা তাকে হিসাব না দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখান। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকে মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সম্পত্তির হিসাব চাওয়ায় ২০১৮ সালের ২ মে গোফরান মিয়াকে মারধর করেন অভিযুক্তরা।

ওই ঘটনায় চলতি বছর ১২ মে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলা জজ আদালতে গোফরান মিয়া একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকে আবুল হাসেম, রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবালসহ অন্যরা  গোফরান মিয়াকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার হুমকিও দিয়েছিলেন।

একপর্যায়ে গোফরান মিয়ার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গত ১৬ অক্টোবর গোফরান মিয়া চাটখিলের সানোখালি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১৭ অক্টোবর সকালে আনুমানিক ১০টার সময় গোফরান মিয়া নাস্তা শেষে নিজ বাড়ির ছাদে যান। পূর্ব বিরোধ ও মামলার জেরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গোফরান মিয়াকে দেশীয় অস্ত্র-হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন অভিযুক্তরা। এছাড়াও লোহার রড পেটে ঢুকিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যান তারা।

এ ঘটনার এক ঘণ্টা পর বাড়ির দারোয়ান ও নিহতের স্বজন জহির ইকবাল চাটখিল থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সোমবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিহত গোফরানের ছেলে-মেয়েরা দেশে এসে অভিযোগ দায়ের করেন।  

গোফরানের মেয়ে রুবিনা ইসলাম জানান, তাদের শত কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্যই তার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি খুনিদের ফাঁসির দাবি করেছেন। ঘটনার পর থেকে অনেকে এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় নোয়াখলা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল সোহাগ বলেন, আলামত দেখে মনে হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। বাকিটা পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার ও মঙ্গলবার পিবিআই নোয়াখালীর দুইটি টিম পৃথকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

পিবিআই পরিদর্শক তৌহিদুর রহমান জানান, যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন সেহেতু এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভার পিবিআই পেলে অধিকতর তদন্ত করা হবে।

চাটখিল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটি হত্যা না অন্যকিছু তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 dailychatkhilkhobor.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com