শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন
সেনবাগে রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীকে হত্যা… আদালতে স্ত্রীর স্বীকারোক্তি
পরকীয়া প্রেমের জের, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে স্বামীকে হত্যাকান্ড
নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ব্যবসায়ী মো. মঈন উদ্দিনকে (৪৬) ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনজনের সহায়তায় এ কাজ করেছেন মঈন উদ্দিনের স্ত্রী রজ্জবের নেছা ওরফে রিনা নিজেই। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) নোয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসাইন মঙ্গলবার বিকেলে নিহত মঈন উদ্দিনের স্ত্রী রজ্জবের নেছার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে রজ্জবের নেছাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত মাসুদসহ অন্য তিন আসামির কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে, রোববার (৬ আগস্ট) দিবাগত রাত তিনটার দিকে সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের হরিণকাটা গ্রামে মঈন উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। খবর পেয়ে সেনবাগ থানার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে মঈন উদ্দিনের স্ত্রী রজ্জবের নেছা স্বামীকে হত্যার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন। রজ্জবের নেছা জানান, তার স্বামী চট্টগ্রামে খাবারের হোটেলের ব্যবসা করতেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন। এরই মধ্যে প্রায় তিন-চার বছর আগে তার (রজ্জবের নেছা) সঙ্গে প্রতিবেশী মাসুদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাসুদ তার স্বামী মঈন উদ্দিনের বন্ধু ছিলেন। রজ্জবের নেছা জানান, তার ও মাসুদের সম্পর্কের বিষয়টি এক পর্যায়ে জানাজানি হয়ে যায়। যার কারণে প্রায় ৯-১০ মাস আগে তার স্বামী রাগের মাথায় তাকে মৌখিকভাবে তালাক দেন। পরবর্তী সময়ে সন্তানদের কথা বিবেচনা করে তাকে আবারও বাপের বাড়ি থেকে ফিরিয়ে আনেন।
রজ্জবের নেছা আরও জানান, স্বামীর বাড়িতে ফিরে এলেও মাসুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তার স্বামী চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে আসার বিষয়টি মাসুদ ভালোভাবে নিতে পারেননি। এর জেরে মাসুদের পরিকল্পনায় তিনি (রজ্জবের নেছা) দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রোববার রাতে স্বামীকে খাওয়ান। দুধ খাওয়ার পর স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে তিনি ও মাসুদসহ তিন আসামির সহায়তায় মঈন উদ্দিনকে আনুমানিক রাত তিনটার দিকে ঘর থেকে বের করে ঘরের দরজায় আনেন। তখন মাসুদ তার স্বামীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অচেতন অবস্থায় রেখে যান। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাড়ির লোকজনকে জড়ো করে কে বা কারা তার স্বামীকে হত্যা করে ফেলে গেছে বলে জানান।
ওসি ইকবাল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিনের লাশ উদ্ধার ও ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পারিপার্শ্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে স্ত্রী রজ্জবের নেছার বিষয়ে তাদের সন্দেহ হয়। এ কারণে লাশ উদ্ধার করে আনার সময় রজ্জবের নেছাকেও সঙ্গে করে থানায় নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে খোঁজখবর নিয়ে স্ত্রী রজ্জবের নেছার সঙ্গে মাসুদ নামের এক প্রতিবেশীর পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জানা যায়। যার ভিত্তিতে গতকাল সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রজ্জবের নেছা স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঈন উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় তার মা রাহেলা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় প্রতিবেশী মাসুদের সঙ্গে টাকাপয়সা লেনদেন নিয়ে মঈন উদ্দিনের বিরোধ ছিল এবং মাসুদ মঈন উদ্দিনকে ইতোপূর্বে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করার পর রজ্জবের নেছাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply