সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাটখিলে খালে মিললো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া ৬১২ বুলেট মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে আড়াল করার জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত টেকনাফের করিম মেম্বার চাটখিলে ব্যবসায়িকে অপহরন-চাঁদা দাবি -থানায় মামলা চাটখিলের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামীলীগের ২৯ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অপারেশন ক্লিন লীগ’ ঘোষণার দাবি গণঅধিকার পরিষদ নেতার বন্যা দুর্গতদের মাঝে এন আর বি ব্যাংকের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চাটখিলে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র লীগের হামলার অভিযোগ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় পুলিশের এস আই ক্লোজড সোনাইমুড়ীতে মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে গুলি করে হত্যা
কোটা বহালের আন্দোলনেও শাজাহান খান!

কোটা বহালের আন্দোলনেও শাজাহান খান!

বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এবং সড়ক খাতে কোনো কিছু হলেই আলোচনায় আসে পরিবহন খাতের নেতা ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নাম। এবার তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন এবং আন্দোলনের দায়িত্ব তাঁর হাতে তুলে নিয়েছেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা, আর মন্ত্রিসভার একজন সদস্য হয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অবশ্য আন্দোলনকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একাংশ বলছে, নৌপরিবহনমন্ত্রী এই আন্দোলনের দায়িত্ব নেওয়ার পরই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। তাঁদের অভিযোগ, মন্ত্রী এই আন্দোলন ‘ছিনিয়ে’ নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং তাঁর ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আন্দোলনে নেতৃত্বে আনতে চাইছেন। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন কার্যত দুই ভাগ হয়ে যায়। এক পক্ষ শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ তৈরি করে ছোট পরিসরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল।

এই বিভক্তির মধ্যেই গত শুক্রবার আবার মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আলাদা কমিটি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কমিটিতে আগের মুখপাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক আ ক ম জামাল উদ্দীনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর সদস্যসচিব করা হয়েছে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে।

তবে এটি মানছে না মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের একাংশ। এই অংশের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাপ্রবাহে দেখা গেছে, নৌপরিবহনমন্ত্রী আসার পর থেকেই আন্দোলন ব্যাহত হয়েছে। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, যাঁরা আন্দোলন অন্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তাঁরাই আবার সবার সঙ্গে আলোচনা না করেই কমিটি করেছেন। এতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা ক্ষিপ্ত।

যদিও জামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেছেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এই কমিটি ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সরকারের ভেতর-বাইরে থেকেও অভিযোগ উঠেছে, শাজাহান খান মন্ত্রী হয়েও কখনো শ্রমিকনেতা হিসেবে পরিবহন খাতে, কখনো তৈরি পোশাক খাতে, আবার কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের ব্যানারে বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করছেন। এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও তিনি কখনো দমে যাননি।

৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনে যুক্ত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিশ্বাস নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রীর হাতে আন্দোলনের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। মন্ত্রীও কঠোর আন্দোলনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন ‘ভিন্ন কিছু’ দেখছেন তাঁরা।

অবশ্য এ বিষয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আন্দোলনের কেউ নন, আন্দোলন করছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। তিনি তাঁদের সহযোগিতা করছেন। আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, স্তিমিত হয়নি, ২১ অক্টোবর (আজ) সংবাদ সম্মেলন হবে।

এত দিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হতো অগ্রাধিকার কোটায়। বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হতো মেধা কোটায়। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৩ অক্টোবর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। এদিনই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনে নামেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে ৮ অক্টোবর শাজাহান খান শাহবাগে আন্দোলনস্থলে যান। তখন আন্দোলনের দায়িত্ব তাঁর কাছে অর্পণ করেন আন্দোলনকারীরা। শাজাহান খান অবরোধ স্থগিত ঘোষণা করেন এবং ১৪ অক্টোবর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন বলে জানান। তিনি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের’ নামে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এ সময় মন্ত্রী ঘোষণা দেন এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যাতে রাজাকার, আলবদরের সন্তানেরা আন্দোলনের বিস্ফোরণে দেশের মাটি থেকে চিরতরে চলে যায়। বাস্তবে এরপর মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের ব্যানারে তেমন কিছুই হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, শাজাহান খানের নেতৃত্বে আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ নামের একটি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের ব্যানারে তিনি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিও পালন করছেন। এখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আন্দোলনও তাঁর অধীনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চের আহ্বায়ক জামাল উদ্দীন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ জ্যেষ্ঠদের সংগঠন। তাঁরা আলাদাভাবে আন্দোলন করবেন।

নানা সংগঠনের নেতৃত্বে শাজাহান খান

একসময়ের জাসদ নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের বাড়ি মাদারীপুরে। তিনি মাদারীপুর-২ আসনের সরকারি দলের সাংসদ। নৌপরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও তিনি সড়ক পরিবহন খাতেই বেশি আলোচিত। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। এর আগে ২০০১ সালে গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কার্স লীগ প্রতিষ্ঠা করে সভাপতি হয়েছিলেন। ২০১২ সালে জাতীয় শ্রমিক লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হন। ২০১৩ সালে গড়ে তোলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ। প্রথমে এর আহ্বায়ক হন এবং পরে সভাপতি হন। ২০১৩ সালে বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সমন্বয়ে গঠিত ‘গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ’–এর আহ্বায়ক হন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে গঠন করেন ‘শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ’। তাঁর নেতৃত্বে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন’ নামের আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই তিনি একের পর এক সংগঠন গড়ে তুলে নেতৃত্ব দিয়ে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

তবে পরিবহন খাতের বিভিন্ন বিষয়ে বেশি আলোচিত হন। সম্প্রতি বাসচাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার দিনে তাঁর হাসিমুখে দেওয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে তিনি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এর আগে একবার ‘সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকেরা দায়ী নন’ বলে মন্তব্য করে সমালোচিত হন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শাজাহান খান দর-কষাকষির শ্রমিক সংগঠনের নেতা এবং মন্ত্রী হিসেবে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষও। ফলে এতে স্বার্থের সংঘাত হয়।

সরকারের একাধিক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, মাঠ গরম বা দখলে রাখতে এবং আলোচনায় থাকার জন্য শাজাহান খান এসব করেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁকে এ বিষয়ে কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি। বরং তাঁর কর্মকাণ্ডে সরকার অনেক সময় বিব্রত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 dailychatkhilkhobor.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com