সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাটখিলে খালে মিললো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া ৬১২ বুলেট মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে আড়াল করার জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত টেকনাফের করিম মেম্বার চাটখিলে ব্যবসায়িকে অপহরন-চাঁদা দাবি -থানায় মামলা চাটখিলের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামীলীগের ২৯ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অপারেশন ক্লিন লীগ’ ঘোষণার দাবি গণঅধিকার পরিষদ নেতার বন্যা দুর্গতদের মাঝে এন আর বি ব্যাংকের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চাটখিলে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র লীগের হামলার অভিযোগ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় পুলিশের এস আই ক্লোজড সোনাইমুড়ীতে মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে গুলি করে হত্যা
নির্বাচনের ধরন বুঝে ঠিক হবে প্রার্থী

নির্বাচনের ধরন বুঝে ঠিক হবে প্রার্থী

কেউ বলেন এটি ‘ভিআইপি’ আসন। কারও মতে এটি সাবেক ‘জেনারেলদের’ আসন। অবশ্য ২০১৪ সালের একতরফা সংসদ নির্বাচনে বিএনএফের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সাংসদ হওয়ার পর অনেকেই বলছেন, আসনটি অভিভাবকহীন। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে একাধিক সাবেক ‘জেনারেল’ প্রার্থী হতে পারেন। রাজধানীর অভিজাত গুলশান-বনানী ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনটি ঢাকা-১৭।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের অন্তত ১০ জন নেতা এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কোন জোট থেকে কে মনোনয়ন পাবেন, তা নির্ভর করছে নির্বাচনটা কেমন হবে তার ওপর। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে দলের কেউ সাংসদ হননি।

২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হন। আওয়ামী লীগের নেতারা এরশাদের পক্ষে ভোট করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে নানা রাজনৈতিক খেলার মধ্যে হঠাৎ আলোচনায় আসা দল বিএনএফের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ সাংসদ হন। তাঁর সহযোগী হয় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান এবং কোষাধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিন। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে রাজনীতি করে আসা কাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন করার বিষয়ে দলের উচ্চপর্যায়ে তিনি নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তবে প্রার্থিতার বিষয়টি নির্ভর করছে জোট-মহাজোটের ওপর।

সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দিনের পক্ষে বেশ কয়েক মাস আগেই গুলশান-বনানী এলাকায় পোস্টার লাগানো হয়। ঢাকা-১১ আসনের সাংসদ ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে নেতা–কর্মীরা জানান।

ওয়াকিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ বছর ধরে এ এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংসদ নেই। এরশাদ ‘ভিআইপি’ বলে লোকজন তাঁর কাছে যেতে পারে না। আর আবুল কালাম আজাদ মাঠের রাজনীতি সেভাবে করেন না। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী হোক, সেটি চান নেতা-কর্মীরা। ২০০৮ সাল থেকে এলাকায় কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

বিএনপিতে অবশ্য প্রার্থীর তালিকা সংক্ষিপ্ত। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ছাড়া মনোনয়নের জোরালো দাবিদার তেমন কেউ নেই।

এর বাইরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বর্তমান সাংসদ ও বিএনএফের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদাও এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। এ ছাড়া িবএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকেও বিএনপির একটি অংশ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছে।

এরশাদ বড় ফ্যাক্টর
জাতীয় পার্টির সূত্র বলছে, দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন— এটা প্রায় নিশ্চিত। ২০০৮ সালে এরশাদ ঢাকা-১৭ ও রংপুরের দুটি আসনে প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন। রংপুরের দুটি আসন ছেড়ে দিয়ে ঢাকারটি রেখে দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে এরশাদ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের অবহিত করেছেন। জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনী মিত্র ধরেই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ।

কামরুল না রুহুল আলম?
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ধারণা, এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁদের বড় কোনো জটিলতায় পড়তে হবে না। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে নির্বাচন করে এরশাদের কাছে হেরে যাওয়া আ স ম হান্নান শাহ মারা গেছেন। এবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরীর নাম আলোচনায় আছে। এর মধ্যে কামরুলের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। আর রুহুল আলম চৌধুরীকে দেওয়া হলে কামরুল ইসলামকে খিলক্ষেত-উত্তরা-উত্তরখান-দক্ষিণখান নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী করা হতে পারে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এই এলাকাগুলো তাঁর নির্বাচনী আসনের অধীনে ছিল।

কামরুল ইসলাম বলেন, দল চাইলে তিনি প্রার্থী হবেন। আর রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, এ আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।

কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও ২০০৮ সালে এ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এরপর ২০১২ সালে তাঁর দল ২০-দলীয় জোটে যোগ দেয়। জোটের শরিক হিসেবে অন্তত একটি আসন দেওয়া হবে কল্যাণ পার্টিকে —এমনটাই আলোচনা আছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির একটি অংশ চায় ইবরাহিমকে এখান থেকে প্রার্থী করতে।

 বিশেষ পরিস্থিতির আশায় আবুল কালাম আজাদ ও নাজমুল হুদা
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা গত ৯ বছরে বিএনপি ছেড়ে নতুন দল ও জোট গঠন, তা ভাঙাসহ নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। নাজমুল হুদার বর্তমান পরিচয় তিনি তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান। গত বছরের মাঝামাঝি সংবাদ সম্মেলন করে প্রয়োজনে নৌকা প্রতীকে ভোট করার ঘোষণা দেন।

অন্যদিকে ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমান সাংসদ আবুল কালাম আজাদ বিএনপি ছেড়ে প্রথমে বিএনএফে যোগ দেন। বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর লক্ষ্যেই বিএনএফের জন্ম বলে আলোচনা আছে। পরে দুজনের দ্বন্দ্বে নাজমুল হুদা বিএনএফ ছেড়ে দেন।

অবশ্য আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, তিনি ঢাকা-১৭ আসনে তো নির্বাচন করবেনই, এমনকি তাঁর দল আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত নির্বাচনে তাঁকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল জানিয়ে আজাদ বলেন, এর মাধ্যমে নির্বাচন বৈধতা পেয়েছিল।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এইচ এম এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে প্রথমবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে দুই নারী প্রার্থীর লড়াইয়ে ৭১ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য সাহারা খাতুন। খালেদা জিয়া পরে আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জয়ী হন কামরুল ইসলাম। তখন সংসদীয় আসন ছিল ঢাকা-৫। ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে এই আসন ভেঙে তিনটি আসনের জন্ম হয়। গুলশান, বনানী ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন। এরশাদ বিএনপির আ স ম হান্নান শাহকে হারিয়ে সাংসদ হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 dailychatkhilkhobor.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com