বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
হরতাল-অবরোধ নয়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই সরকারের পতন :নোয়াখালীতে মির্জা ফখরু
নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
হরতাল-অবরোধ নয়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নোয়াখালী জেলা শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম মাঠে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
বিএনপি একদফার আন্দোলন করছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, এই সরকারের পতন ছাড়া মানুষের মুক্তি মিলবে না। গণঅভ্যুত্থানেই সরকারের পতন হবে।
তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘আর কোনো সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারো বলছি, ভালো ছেলের মতো সুবোধ বালক-বালিকার মতো পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন। যদি ভালোই ভালোই শুনে পদত্যাগ করেন তাহলেতো ভালো। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।’
এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ, দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগান দেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘আর কতদিন আমরা এই অত্যাচার নীরবে সহ্য করব। আপনারা কি সহ্য করতে রাজি আছেন?’ সবাই এ সময় সমস্বরে ‘না’ সূচক জবাব দেন।
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার থাকলে, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। এজন্য সবাইকে বোকা বানিয়ে বিচারব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে, খায়রুল হকের ওপর জোর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করা হয়। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে, নিরপেক্ষ সরকার থাকলে, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। ত্রিশটি আসনও পেত না।’
মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তারা বলে নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করব। আমরাই ভোট দেওয়াবো, আমাদের মতো করে সকলকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনো বলে ভোট কাকে দিবা। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোট কেন্দ্রে যাইতেই দেয় না।
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বলে তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে, আমি কোনো বাধা দেব না। আমরা ভাবলাম বোধ হয় শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কি করা যাবে বলেন। ভূতের মুখের রাম রাম। আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আমার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করব। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশান হবে। আহারে কী আবদার। শিয়ালের কাছে বার বার কুমিরের বাচ্চা দেওয়া যাবে না। বারবারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দেব না।’
দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এটা একটা লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে। ব্যাংকগুলো সব লুট করতে করতে খালি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার পাচারের টাকা দেশে নিয়ে আসার একটা বিধান করেছে। দেশে নিয়ে এলে আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেন্টটিভ পাবে। কী মজা, আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে রেখে ট্রাক্সের টাকা নিয়ে তারা আবার চোরদের পুরস্কার দিচ্ছে। এ সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, এ সমস্যা শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সমস্যা সমগ্র জাতির। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন।’
কৃষকরা ভালো নেই দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘কৃষক ভাইদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। আগে সার তিনশ টাকা বস্তা ছিল এখন বারো শ’। বিদ্যুতের দাম পাঁচগুণ বেড়েছে। বীজের দাম বেড়ে গেছে। অথচ ফসল বাজারে বিক্রি করতে গেলে দাম পায় না।’
ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘আজ ইমাম সাহেবকে বলে দেওয়া হয় খুতবা কী পড়বে কী পড়বে না। দারোগা এসে বলে যায়। অনেক আলেম-উলামাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। মিত্যা মামলা দিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত খালেদা জিয়া। মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে বন্দী রেখেছে। আজ আট বছর হয়ে গেছে।’
‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ এই স্লোগান নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপির চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতি দল ও মৎসজীবী দল। এই পদযাত্রায় বৃহত্তর নোয়াখালীর পাঁচটি জেলার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
পদযাত্রায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ।
এ সময় নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ আজাদ, নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজম সুমন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান, জেলা বিএনপির সদস্য মো.গোলাম মোমিত ফয়সাল, জেলা শ্রমিক দলের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply