সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনও জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির নেতারা। তারা বলছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে।
প্রতীকী অনশনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনও জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। তাকে আজকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। কারাগারে তাকে ন্যূনতম প্রাপ্তিটুকু দেওয়া হচ্ছে না। এই সরকার তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে ছাত্রদলের নেতা ইসহাককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে এমন ৪-৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একটাই, বিএনপিকে রাজনীতি এবং নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখার উদ্দেশ্য একটাই- তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া।’
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে সবাইকে বলে গেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের বিজয় অর্জন করতে হবে। আজকে অনশন থেকে আবারও দাবি করছি, তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’
নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে পুনরায় গঠন করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তবেই দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং দেশে নির্বাচন হবে। অন্যথায় নির্বাচন হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আবারও সেই আহ্বান জানাই দেশের সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। এটা শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির বা বিএনপির নির্বাচনে জয়ের জন্য নয়। এই দেশের মুক্তির জন্য, ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। ’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ, তাকে আইনিভাবে সাজা দেওয়া হয়নি। তাকে রাজনৈতিক কারণে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাই তাকে মুক্ত করতে হবে রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে।’
দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া হাইকোর্টের জামিন পাওয়ার পর নিম্ন আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেট সরকারের নির্দেশে জামিন স্থগিত করেছে। এতে প্রমাণিত হয় দেশে কোনও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নেই।’
এ সময় মওদুদ আহমদ উপস্থিত নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য রাজি আছে কিনা জানতে চাইলে সবাই হ্যাঁ বলেন। তখন মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এখানে হ্যাঁ বলছেন, কিন্তু আন্দোলন ঘোষণা করা হলে তো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন নেতাকর্মীরা মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন গালমন্দ করতে থাকেন।’
মহাসচিবের সভাপতিত্বে অনশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, কবির মুরাদ, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছিলেন যুক্তফ্রন্টের সদস্য সচিব নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ ও খেলাফত মজলিশের মাওলানা সৈয়দ মজিব।
Leave a Reply