সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
ভালো মানের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাংলাদেশে ক্যাম্পাস পরিচালনার সুযোগ দিতে সরকার ৪ বছর আগে বিধিমালা প্রণয়ন করলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে, সঙ্গে চলছে প্রতারণাও। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিধিমালার আলোকে শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হলে অসাধু ব্যক্তিরা এভাবে প্রতারণার সুযোগ পেত না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর আলোকে উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণের জন্য ২০১৪ সালে ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্ট্যাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা’ প্রণয়ন করে সরকার। বিধিমালা অনুযায়ী, এই ধরনের ক্যাম্পাস পরিচালনার জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরমে নির্ধারিত যোগ্যতা, অবকাঠামো সিলেবাসসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিকট আবেদন করতে হবে। কমিশন এই আবেদন যোগ্য মনে করলে তা সরকারের নিকট সুপারিশসহ পাঠাবে।
ইউজিসি জানিয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের আবেদন মঞ্জুর করে ইউজিসি শিক্ষামন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পেশ করে। কিন্তু এখনও কোন ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমোদন দেয়নি শিক্ষামন্ত্রণালয়। এই সুযোগে বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শাখা ক্যাম্পাস খুলে ব্যবসা করছে।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের একাংশের আপত্তি রয়েছে। ফলে শিক্ষামন্ত্রণালয় বিধিমালা প্রণয়ন করলেও বাস্তবায়ন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।
অন্য দেশে কী আছে : উন্নত দেশগুলোতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। অষ্ট্রেলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হলেও সেখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা। চীনে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে ৩৭টি। মালয়েশিয়ায় ১২টি, সিঙ্গাপুরে ১১টি, ভারতে ১০টি এবং দুবাইয়ে রয়েছে ২৪টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দ্যা ক্রস বর্ডার এডুকেশন রিসার্চ টিম (সি বার্ট) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। আবুধাবিতে রয়েছে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, যুক্তরাজ্যের লিড মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে ভারতে। অস্ট্রেলিয়ায় জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে সিঙ্গাপুরে। জার্মানির বার্লিন টেকনিশে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস খোলা হয়েছে মিশরে। আর কাতারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা। চীনে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, আয়ারল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ড, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় অবস্থিত নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু এটি মালয়েশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নটিংহামের শাখা ক্যাম্পাস। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বাংলাদেশে স্থাপন করা গেলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আর মালয়েশিয়ায় যেতে হতো না ।
দেশে ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন করলেও দেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক ধরনের প্রতিযোগিতায় পড়বে। ফলে মান বাড়াতে তারা বাধ্য হবে।
রফিকুল আলম নামে এক শি্ক্ষক বলেন, ঢালাওভাবে বিদেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনাম রয়েছে সেগুলোকেই অনুমোদন দিতে হবে। এজন্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে এসব প্রতিষ্ঠানের মানও যাচাই করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সরকার বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এই বিধিমালা বাস্তবায়ন হলে এত শিক্ষার্থী বিদেশে যেত না।
Leave a Reply