সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন
বাতাসের সঙ্গে সাগরের উত্তাল ঢেউ। ঢেউয়ে মিশে যায় শরীর। প্রতিটি ঢেউয়ে তাল মিলেয়ে নেচে-গেয়ে উল্লাসে মেতে উঠে সবাই। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রেমিক-প্রেমিকা, দেশি-বিদেশির মনে লেগেছে ঢেউ।
কেউ কেউ সাঁতার না জানায় বয়া নিয়ে সাগরে গোসল করছেন। কেউ বিচে ফুটবল খেলছেন। কেউ সাগরের সৌন্দর্যের ছবি তুলছেন। আবার কেউ বিচ চেয়ারে শুয়ে শুয়ে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এভাবেই যে যার মতো উপভোগ করছেন সাগরকন্যার সৌন্দর্য।
বলছি, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটার কথা। ঈদুল আজহার পাঁচদিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সাগরকন্যা। সমুদ্র সৈকতের দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটারজুড়ে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। পর্যটকের ভিড়ে পর্যটন শিল্প যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
ঈদের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। বিপুল পর্যটক পেয়ে হোটেল-মোটেলের মালিক ও কর্মচারীরা অনেক খুশি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাস, টেম্পু, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসযোগে দলে দলে পর্যটক আসতে শুরু করেন এখানে। পর্যটকদের আতিথেয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, হোটেল ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, কুয়াকাটার রাখাইন মার্কেট, ঝিনুকের দোকান, খাবারঘর, চটপটির দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচাকেনার ধুম পড়েছে।
সৈকতের সৌন্দর্যের পাশাপাশি পর্যটকরা ঘুরে দেখছেন, রাখাইনদের সর্ববৃহৎ মন্দির এবং মিশ্রি পাড়ার বৌদ্ধ মূর্তি, কুয়াকাটার পাতকুয়া, ইকোপার্ক, খাজুরা গহীন বনের ইকোপার্ক, কাউয়ার চরের বিশালাকৃতির বিচ আর গঙ্গামতির বনায়ন ও বিচে লাল কাকড়ার সমাবেশ, টুফানিয়ার চরদ্বীপ, সোনার চর, শুঁটকিপল্লী, রাখাইন পাড়ার তাঁত শিল্পসহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনা।
ঢাকা থেকে সপরিবারে সৈকতে ঘুরতে আসা ইতালি প্রবাসী সুমন সিকদার বলেন, ঈদের ছুটি কাটাতে পরিবারসহ এখানে এসেছি। এখানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। সকাল থেকে সবাই আনন্দ উল্লাস করছি। আরও দুদিন থাকব এখানে। বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখব।
রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী তৃপ্তি বলেন, সমুদ্র পাড়সহ অন্যান্য স্পটগুলো ঘুরে দেখেছি। আমার সঙ্গ স্বজনরাও আছেন। এসব জায়গা ঘুরে অনেক আনন্দ পেয়েছি। জীবনে প্রথম আসলাম। এখানে না আসলে বুঝতামই না আমাদের দেশে এত সুন্দর সুন্দর স্থান ও স্থাপনা রয়েছে। এক কথায় মনে ভরে গেছে।
কুয়াকাটা হোটেল ইনের ইনচার্জ ফয়সাল বলেন, গতকাল ঈদের দিনে এখানে পর্যটক ছিল। তবে সেটা ছিল অল্প। সকাল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। কোনো রুম খালি নেই। ঈদের আগেই সব বুক হয়ে গেছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, বন্ধের দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের চাপ একটু বেশি থাকে। ঈদের সেটি বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। পর্যটকদের সেবা দিতে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি সর্বদা প্রস্তুত। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. খলিলুর রহমান বলেন, দর্শনীয় স্থানসহ পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঈদঘিরে পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে।
Leave a Reply