সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন
সুবর্ণা রানী দাস রাজবাড়ীর মেয়ে। পৃথিবীর রং দেখার সুযোগ হয়নি তার। জন্মান্ধ। দুই বছর বয়সে বাবাকে হারায়। কাঁথা সেলাই করে অভাবের সংসার টেনেটুনে চালান মা।…ভাবছেন, আহা রে মেয়েটা, জীবনটাই বুঝি বৃথা।
একে তো জন্মান্ধ, তার ওপর দরিদ্র। কিন্তু না, সুবর্ণা অদম্য। প্রথম আলোর প্রতিনিধির বরাতে জানা যায়, জেলার ইয়াসিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এ বছর জিপিএ–৫ পেয়েছে সুবর্ণা। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে। মায়ের সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে গেছে—রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। এখানেই শেষ নয়, অদম্য মেধাবী মেয়েটি শিল্পকলা একাডেমি থেকে উচ্চাঙ্গসংগীতে চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন আবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিচ্ছে! এতক্ষণে নিশ্চয়ই পাল্টে গেছে আপনার মন? ভাবছেন, থেমে যাবে না তো সুবর্ণা!
আর ঠিক এই ভাবনা থেকেই সুবর্ণা ও তার মতো আরও অনেক অদম্য মেধাবীর পাশে আছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংক। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তাদেরই সংবর্ধনা দেওয়া হবে, যারা এ বছর ব্র্যাক ব্যাংক–প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে লেখাপড়া যেন থেমে না যায় মেধাবীদের।
প্রতিবছর প্রথম আলো ট্রাস্টের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই আর ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যাই। কত অল্পে ভেঙে পড়ি আমরা! কত সুযোগ–সুবিধা পেয়ে কী করছি? কতটা বোঝাতে পারছি আমাদের সন্তানদের? কোচিং থেকে কোচিংয়ে ছুটে চলা প্রজন্ম তৈরি করছি। চেতনায় আঘাত করে না ভ্যানচালক রাসেলের জিপিএ–৫ পাওয়ার কাহিনি! প্রাইভেট পড়া দূরে থাক, কুপির কেরোসিন ফুরিয়ে যাবে বলে রাতের পড়া দীর্ঘ করতে পারত না।
মনের জোর নেব বলেই প্রতিবছর মন দিয়ে ওদের গল্প শুনি এই অনুষ্ঠানে। তবে দেশজুড়ে থাকা প্রথম আলোর প্রতিনিধিরাই খুঁজে বের করে এই অদম্য মেধাবীদের। তাদের স্যালুট। নয়তো জানাই হতো না সিনেমার মতো জীবনের গল্পগুলো। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যাকে বললেন তাঁর শিক্ষক জীবনের সেরা ছাত্র, সেই আয়াতুল্লাহ পরিবারের দুর্দশা কাটাতে, মায়ের যক্ষ্মার চিকিৎসা করাতে পরীক্ষার আগে কাজ নেয় ইটভাটায়। এই হার না মানা অদম্য ছাত্রছাত্রীরাই আজ আসবে ঢাকায় প্রথম আলো ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে। হয়তো অনেকেরই প্রথম ঢাকায় আসা। ওদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নামকরা শিক্ষক, সাংস্কৃতিক জগতের জনপ্রিয় মানুষেরা।
আজ ১২৭ জন অদম্য মেধাবী পাবে সংবর্ধনা। এদের বেশির ভাগের দায়িত্ব নিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এ ছাড়া মিতুলী মাহবুব, শাহেদ ইকবালের মতো ব্যক্তি পর্যায়ের সহায়তাও আছে। সবার প্রতি প্রথম আলোর কৃতজ্ঞতা।
থ্রি থেকে ফোরে উঠবে শিশুটি। ভর্তির ফি পাঁচ টাকা। পরিবার থেকে বলা হলো, ‘পাঁচ টাকা দেওয়া সম্ভব না। তুই আবার থ্রিতেই পড়।’ সেই ছেলেটি রাজশাহী বোর্ড থেকে এসএসসি এবং এইচএসসিতে মেধাতালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করলেন। সহযোগিতার হাত বাড়ালেন অনেকেই। ছিল প্রথম আলো ট্রাস্টও। অদম্য ছেলেটি এগিয়ে চলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অনার্স–মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি। অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!
এমন সব অদম্য কাহিনি শোনা যাবে হয়তো আজও।
Leave a Reply