সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাটখিলে খালে মিললো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া ৬১২ বুলেট মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে আড়াল করার জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত টেকনাফের করিম মেম্বার চাটখিলে ব্যবসায়িকে অপহরন-চাঁদা দাবি -থানায় মামলা চাটখিলের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামীলীগের ২৯ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অপারেশন ক্লিন লীগ’ ঘোষণার দাবি গণঅধিকার পরিষদ নেতার বন্যা দুর্গতদের মাঝে এন আর বি ব্যাংকের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চাটখিলে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র লীগের হামলার অভিযোগ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় পুলিশের এস আই ক্লোজড সোনাইমুড়ীতে মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে গুলি করে হত্যা
সিনেমার জগতে মেয়েরা অনেক বেশি নিরাপদ

সিনেমার জগতে মেয়েরা অনেক বেশি নিরাপদ

প্রশ্ন: প্রথমে জানতে চাই, এই নির্বাসনের কারণ কী? মানে নিজেকে বলিউড থেকে কেন এত দিন দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন?

প্রীতি জিনতা: আমি ক্রিকেট মানে আইপিএল নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। আর এটা মাল্টি বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। আর্থিকভাবে এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ ছিল। সিনেমার জগতে আমি ভালোই কাজ করছিলাম তা জানি। কিন্তু ক্রিকেটের জগতে পা রাখার কারণ ছিল, সারা জীবন আমি যেন আর্থিক নিরাপত্তা পাই। অভিনেত্রী হিসেবে কাজ না করলেও আর্থিকভাবে আমি যেন সুরক্ষিত থাকি। এ ছাড়া আইপিএল আমার কাছে ছিল সম্পূর্ণ নতুন। তাই আমাকে এই ব্যবসাটার পেছনে সময় দিতে হচ্ছিল। দলের ৪০ জন পুরুষের মাঝে আমি একমাত্র মেয়ে ছিলাম। ক্রিকেটারদের সঙ্গে মেলামেশা নিয়ে তখন মিডিয়া নানাভাবে আমার সমালোচনা করেছে। আমি কোনো কিছুকে পাত্তা দিইনি। আমি ক্রিকেটারদের পাশে নায়িকা হিসেবে নয়, তাঁদের সহযোদ্ধা হিসেবে থাকতাম। আর আমি কাজের জায়গায় কোনো সম্পর্কে জড়াতে পছন্দ করি না। এত দিন চলচ্চিত্র মাধ্যমে থেকে এই জগতের কারও সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। আমি মনে করি কর্মক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকা উচিত।

প্রশ্ন: ‘ভাইয়াজি সুপারহিট’ ছবিতে অন্য প্রীতিকে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটি করার কারণ কী?

প্রীতি: আমি তো সিনেমা করা ছেড়েই দিয়েছিলাম। সানি (দেওল) স্যার আমাকে ফোন করে এই ছবির প্রস্তাব দেন। আর উনি ‘না’ বলার কোনো অপশন রাখেননি। ভাইয়াজি সুপারহিট ছবির চিত্রনাট্য শুনে আমার অন্যরকম লেগেছিল। খুবই মজার গল্প। আর আমি আগে কখনো টিপ, সিঁদুর পরে ‘দেশি মেয়ে’র চরিত্রে অভিনয় করিনি। মুসলিম বা পাহাড়ি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল সিঁদুর, টিপ, মঙ্গলসূত্র পরে পর্দায় আসব। কিন্তু আমার কাছে সাধারণত শহুরে বা এনআরআই মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করার বেশি প্রস্তাব আসত। সবার বিশ্বাস, আমাকে দেশি চরিত্রে নাকি মানাবে না। দেখি এবার সবার এই ভুল ভাঙে কিনা।

প্রশ্ন: ছবিতে ‘স্বপ্না দুবে’ হয়ে ওঠা আপনার জন্য কতটা কষ্টকর ছিল?

প্রীতি: উত্তর প্রদেশের এক নারী হয়ে ওঠা আমার জন্য খুব সহজ ছিল না। নিজের বডি ল্যাংগুয়েজের দিকে জোর দিয়েছি। সব থেকে বেশি জোর দিয়েছি উচ্চারণে। এখনকার ছবিতে স্থানীয় ভাষার ওপর ভীষণভাবে জোর দেওয়া হয়। দঙ্গল ছবিই তার প্রমাণ। ভারতের যে প্রান্তকে নিয়ে ছবির গল্প বোনা হয়, চরিত্রগুলোও সব দিক থেকে সেখানকার হয়ে ওঠে। তাই আমিও এই দিকটার ভীষণ খেয়াল রেখেছি। আমেরিকা থেকে যখন শুটিং করতে দেশে আসতাম, তখন আসতাম ‘প্রীতি’ হয়ে। আবার দেশ থেকে যখন আমেরিকা ফিরে যেতাম তখন ‘স্বপ্না’ হয়ে। আমেরিকা থেকে ফেরার পর সেটে আমার প্রতিদিনের কাজ ছিল কারও না কারও ওপর কমপক্ষে এক ঘণ্টা চিৎকার করা। কারণ, চরিত্রটা অনেক চড়া। বেশ কিছু দিন আগে আমার বন্ধু পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ আমাকে একটা দেশি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেয়। আমি ছবিটা করব বলেও পরে না করে দিই। তবে ছবির জন্য আমি বিশালের সাহায্য নিয়েছি।

প্রশ্ন: আপনার এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আপনি নানা চরিত্রে দর্শকের সামনে এসেছেন। আপনার অভিনীত কোন চরিত্র অনেকটা আপনারই মতো?

প্রীতি: আমার অভিনীত সব চরিত্রের মধ্যে অল্পবিস্তর কোথাও আমাকে খুঁজে পাই। তবে দিল হ্যায় তুমহারা-র ‘শালু’ অনেকটা আমারই মতো। আমার মধ্যে মেয়েলি ব্যাপার অনেকটা কম। বলা যায়, আমি টমবয় টাইপ।

প্রশ্ন: দেওল পরিবারের দুই ভাই সানি ও ববি, এই দুজনের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে আপনি কার সঙ্গে বেশি সহজ?

প্রীতি: অবশ্যই ববির সঙ্গে আমি অনেক বেশি সহজ। ও আমার খুব ভালো বন্ধু। ববি হলো ‘ঘর কা খেতি’। সানি স্যার একটু গম্ভীর প্রকৃতির। জানেন, ববি আমার নামটাই বদলে দিয়েছে। ও আমাকে ‘প্রীতম’ বলে ডাকে। উইকিপিডিয়াতেও আমার নাম ‘প্রীতম’ বলে উল্লেখ আছে। আসলে মনে করে আমার মধ্যে ছেলে ছেলে ভাব আছে। তাই ও মনে করে আমার নাম ‘প্রীতি’ না হয়ে ‘প্রীতম’ হওয়া উচিত। এমনকি সালমানও তাই মনে করে। তাই সালমান আমাকে ‘জিন্টা’ বলে ডাকে।

প্রশ্ন: এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন যে আপনার মা চেয়েছিলেন আপনি জীবনে স্থির হন। আর এজন্যই আপনি বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন। আপনার কাছে বিয়ের পরিভাষা কি ‘সেটলমেন্ট’?

প্রীতি: কখনোই তা নয়। বিয়ে মানে জীবন নয়। বিয়ে জীবনের একটা অংশ মাত্র। আমি মনে করি সবার আগে একজন মেয়ের শিক্ষিত হওয়া জরুরি। আর তারপরে সে যেন নিজের পায়ে দাঁড়ায়। মেয়েদের আর্থিক স্বাধীনতা খুব জরুরি। মেয়েদের অন্যের ওপর কখনোই নির্ভরশীল হয়ে থাকা উচিত নয়। তাই জীবনে স্থির হতে চাইলে সবার আগে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। তারপরে বিয়ের কথা ভাবা উচিত। মেয়েদের স্বামী, সন্তান এবং সংসারের বাইরেও একটা জগৎ থাকা প্রয়োজন। আমার খুব কাছের বন্ধুকে দেখেছি এখন সে কত একা হয়ে গেছে। তার নিজের কোনো জগৎ নেই। আমি দেখেছি মায়েরা শুধু সংসারে দিতেই থাকে।

প্রশ্ন: আমেরিকাতে আপনার স্বামীর ঘর। আর মুম্বাইতে আপনার কাজের জগৎ। এই দুই সংসার কীভাবে সামলাচ্ছেন?

প্রীতি: আমার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। দিব্যি চলে যাচ্ছে। আর আমার স্বামী আমাকে সব কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আমি রান্না করতে ভালোবাসি। রান্না করার পর ও কিচেন পরিষ্কার করে দেয়। আমেরিকাতে কাজের লোক পাওয়া খুব মুশকিল। তবু আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী রাখতে দেয়নি। ও একদম পছন্দ করে না আমাদের ব্যক্তিগত সময় বাইরের কেউ থাকুক।

প্রশ্ন: স্বামীকে কখনো ভারতীয় খাবার রান্না করে খাইয়েছেন?

প্রীতি: ও ভারতীয় খাবার খেতে খুব পছন্দ করে। তবে রোজ খায় না। নানান ধরনের পরোটা, বাটার চিকেন, ভেলপুরি খেতে ও খুব ভালোবাসে। আমি নিজেই রান্না করি। আর আমি নিজে রান্না করতে এবং খেতে খুব ভালোবাসি।

প্রশ্ন: বিয়ের পর আপনার জীবনে আর কী বদল এসেছে?

প্রীতি: একটা বড় বদল এসেছে যে আমাকে এখন ওর পাল্লায় পড়ে নিয়মিত ওয়ার্ক আউট করতে হয়। আমার স্বামী ফিটনেস নিয়ে খুবই সচেতন। আর উইকএন্ড এলেই ও আমাকে নিয়ে জিমে বা হাইকিং করতে যায়। আমার একদম পছন্দ নয়। আমার কাছে ছুটি মানে অলসভাবে বিছানায় পড়ে থাকা। প্রচুর ‘গোলগাপ্পা’ (ফুচকা) খাওয়া। আর সিনেমা দেখা (সশব্দে হেসে)। বিয়ের পর আমি অনেক স্বাধীনতা পেয়েছি। ওর ইচ্ছেতেই আবার আমি কাজের জগতে ফিরে আসি। আমি রোমান্টিক সিনেমা করলেও ওর আপত্তি নেই।

প্রশ্ন: আপনার অভিনীত কোনো সিনেমা কি আপনার স্বামী দেখেছেন?

প্রীতি: একটা সিনেমাই ও দেখেছে, সেটা হলো বীরজারা। সিনেমাটা ওর খুবই ভালো লেগেছিল। কিন্তু সিনেমাটা দেখার সময় আমি ওকে এমন রানিং কমেন্ট্রি দিয়েছি যে দ্বিতীয়বার ও আর আমার ছবি দেখতে চায়নি। আমি ওকে সব দৃশ্যের পেছনের কাহিনি বলতে থাকি।

প্রশ্ন: শাহরুখ খানের সঙ্গে আবার রোমান্টিক ছবির সুযোগ এলে করবেন?

প্রীতি: নিশ্চয়ই, শাহরুখের সঙ্গে আমার রোমান্টিক ছবির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর ওর সঙ্গে আমি রোমান্টিক সিনে খুবই স্বচ্ছন্দ্য। দিল চাহতা হ্যায় ছবিতে আমিরের সঙ্গে বেশ কিছু রোমান্টিক দৃশ্য আছে। এই ছবির দু-একটা দৃশ্য আমার খুব প্রিয়।

প্রশ্ন: বলিউডে এখন ধীরে ধীরে বদল আসছে। মেয়েরা তাঁদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। এই বদলকে আপনি কী চোখে দেখেন?

প্রীতি: হ্যাঁ, বলিউডে এখন নারীশক্তি জাগ্রত হয়েছে। তবে আমি বলব যে বাকি সব জগতের থেকে সিনেমার জগৎ এখনো অনেক বেশি নিরাপদ। এই জগৎটা সর্বক্ষণ প্রচারের আলোয় থাকে। তাই একটা মেয়ে আওয়াজ তুললে সমগ্র দুনিয়া তা শুনতে পায়। মিডিয়া তার পাশে থাকে। কিন্তু অন্য সব জগতে মেয়েরা চরমভাবে হেনস্তার শিকার হয়। তাদের কথা শোনার কেউ নেই। আমি নিজের চোখে দেখেছি করপোরেটসহ বাকি সব জগতে মেয়েদের কীভাবে দিনের পর দিন শোষিত হতে হয়। তবে আমি কখনো কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। আমি আমার পাশে ভালো লোকজনই পেয়েছি। তার মানে এই নয় যে ইন্ডাস্ট্রিতে মন্দ মানুষ নেই। তবে একটা বিষয় খারাপ লাগে, মেয়েরা যখন আওয়াজ তোলে তখন তাদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। আমি মনে করি এ ব্যাপারে মেয়েরা ৯৯ শতাংশ সত্যি কথা বলে। তবুও তাদের চরিত্রের দিকে আঙুল তোলা হয়। একটা বিষয় আমার ভালো লেগেছে যে লেখক চেতন ভগতের সৎসাহস দেখে। তিনি তাঁর অন্যায়ের কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মানুষমাত্রই ভুল হতে পারে। আর যদি কখনো ভুল হয়ে যায় তা স্বীকার করে নেওয়া উচিত। তবে আমি এখনো বলব সিনেমা জগতে মেয়েরা অনেক বেশি নিরাপদ। এই জগৎ বাকি সব জগতের থেকে অনেক ভালো।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 dailychatkhilkhobor.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com