সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
বিশ্বের বাসযোগ্য নগরের সালওয়ারি তালিকা তৈরি করে দি ইকোনমিস্ট গ্রুপের গবেষণা বিভাগ দি ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এটি ‘বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। গত মঙ্গলবার ২০১৮ সালের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বাসযোগ্য নগরের তালিকায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঢাকার পরে অর্থাৎ তালিকার সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। বেশ কিছু মানদণ্ডের নিরিখে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।
বাস্তব পরিস্থিতি একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারে। ঢাকা মহানগরে যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ও বিভিন্ন নির্মাণকাজের কারণে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা প্রভৃতি সমস্যা বর্ধমান। বায়ুদূষণ আশঙ্কাজনক; মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে মাত্রা সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ১৭২ মাইক্রোগ্রাম। অথচ জাতীয়ভাবে পিএম ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিও ভালো নয়। মশাবাহিত রোগ; যেমন—চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু প্রভৃতির ঝুঁকি রয়েছে যথেষ্ট মাত্রায়। ময়লা-আবর্জনার কারণে দূষিত পরিবেশ; পেটের পীড়া, জন্ডিস ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় মানুষ। ঢাকার একটি বার্ষিক উপদ্রব ডায়রিয়া। বছরে দুবার, বর্ষার শুরুতে ও শেষে এ উপদ্রব দেখা দেয়। পয়োনিষ্কাশন ভালো নয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ঢাকার মলমূত্রের মাত্র ২ শতাংশের নিরাপদ নিষ্কাশন হয়। বাকিটা মিশে যায় প্রকৃতিতে, পানির উেস। বিবিএস ও ইউনিসেফের তথ্য মতে, ঢাকায় সরবরাহ করা পানির দুই-তৃতীয়াংশে মলবাহিত জীবাণু থাকে। এটি জনস্বাস্থ্যের অন্যতম বড় ঝুঁকি। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো নয় বলে একটু বৃষ্টি হলেই স্যুয়ারেজ, ড্রেন আর পাইপের পানি একাকার হয়ে যায়। নিয়মিত খোঁড়াখুঁড়িও এ মিশ্রণের কারণ।
বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা প্রকট সমস্যা। ঘণ্টাখানেকের টানা বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় ঢাকার রাস্তাঘাট। কিছু এলাকা; যেমন—মিরপুর, মানিকনগর, মালিবাগ, ওয়্যারলেস, তেজগাঁও, পল্লবীর কালশী রোড, দৈনিক বাংলা মোড়ে রাস্তায় পানি থইথই করে। ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী যাত্রীরা। বেশির ভাগ রাস্তা ও গলি অপ্রশস্ত, ইট-খোয়া-বিটুমিন ওঠা, ময়লায় ভর্তি। এসবের ফল যানজট। রাস্তার সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নেই। সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি চলে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সন্তোষজনক বলা যায় না। ছিনতাই-রাহাজানি নিত্য ঘটনা; খুনখারাবি আছে। বাজারও নিয়ন্ত্রণহীন, বিশেষ করে শাকসবজির বাজার। পাইকারি ও খুচরা দরে পার্থক্য অনেক। বাসযোগ্যতার সূচকে এসবই বিবেচনা করা হয়।
স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো—এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক’ তৈরি করা। এসবের মধ্যে মোট ৩০টি সূচক রয়েছে। গৃহযুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদের কারণে দামেস্ক তালিকার সর্বনিম্নে রয়েছে। এসব সমস্যা না থাকার পরও প্রতিটি মানদণ্ডে ঢাকা পিছিয়ে আছে; স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোতে বেশি পিছিয়ে। মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে ঢাকার স্কোর মাত্র ৩০।
বাস্তব পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে কেন ঢাকা বাসযোগ্য নগরের তালিকার তলায় রয়েছে। ভালো স্কোর করতে না পারলে উত্তরণ ঘটবে না। আমরা আশা করব, ঢাকার সিটি করপোরেশন ও সরকার তালিকার প্রতিটি সূচক খতিয়ে দেখবে এবং দ্রুত উত্তরণমূলক ব্যবস্থা নেবে।
Leave a Reply