সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পূর্বাহ্ন
দেশের ব্যাংকগুলোয় সাইবার হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত কমিশন আদায় করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্লেখ্য, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ঋণ পরিশোধ করা হলেও ব্যাংকগুলো এতদিন পূর্ণ মেয়াদে কমিশন আদায় করছিল।
মূলত এটি বন্ধ করতেই অতিরিক্ত কমিশন আদায় না করা সংক্রান্ত নির্দেশনাটি জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণত তিন মাসের ব্যাংক গ্যারান্টির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনায় কমিশন আদায় করছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অভিযোগ হচ্ছে, গ্যারান্টির মেয়াদ তিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হলেও ব্যাংকগুলো পূর্ণ সময়ের কমিশন আদায় করে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ তিন মাস বা এর চেয়ে কম সময়ের জন্য হলে সে ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ তিন মাসের নির্ধারিত কমিশন আদায় করতে পারবে। তবে ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ যদি তিন মাসের চেয়ে বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে যে তারিখ থেকে গ্যারান্টির মেয়াদ পূর্ণ হবে, নির্ধারিত ওই তারিখ পর্যন্ত কমিশন আদায় করতে হবে, এর বেশি আদায় করা যাবে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাংকগুলোর মাত্রাতিরিক্ত চার্জ ও কমিশন আদায়ের ফলে উদ্যোক্তাদের ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। বস্তুত ব্যবসায়ী, ঋণগ্রহীতা ও সাধারণ গ্রাহকদের হিসাব থেকে সার্ভিস চার্জ ও হরেকরকম কমিশন আদায়ের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ কেটে নেয়া হচ্ছে। উচ্চসুদ, অহেতুক সার্ভিস চার্জ ও কমিশন বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিশন আদায় সংক্রান্ত নির্দেশনার বাস্তবায়ন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সাইবার অপরাধী কর্তৃক বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সতকর্তামূলক নির্দেশনা জারি করেছে, সেটিকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা চুরি হয়, যার বেশিরভাগ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রিজার্ভ চুরির ঘটনা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়- এতে কোনো সন্দেহ নেই।
উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সাইবার সিকিউরিটি ও হ্যাকিং সংক্রান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে, এ ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ নেই। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। চাইলেও আমরা এর বাইরে থাকতে পারব না।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ভালো দিকের পাশাপাশি অনেক মন্দ দিকও রয়েছে। মন্দ দিকগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। তা না হলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে। এ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা দুটি নির্দেশনাই সময়োপযোগী। তবে এগুলো যাতে কার্যকর করা হয়, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
Leave a Reply