সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন
ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে মানবসম্পদ, শিক্ষা এবং দক্ষতার উন্নয়নে অধিক বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মানবসম্পদ, শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নে অবশ্যই আরও বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়ন অ্যাজেন্ডার প্রতিশ্রুতির বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।’
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় মঙ্গলবার পাঁচ দিনব্যাপী বিশ্ব বিনিয়োগ ফোরামে বিশ্বনেতাদের বিনিয়োগ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। তিনি অগ্রাধিকারভিত্তিক বিশেষ ইনসেনটিভ প্রদানের মাধ্যমে গ্রিন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অধিক বিনিয়োগ করতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশ্বায়নের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, শিল্পবিপ্লব এবং বিজ্ঞান আবিষ্কারে গতি আনতে বছরের পর বছর সময় লেগেছে। বিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তির অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। ফলে যে যোগাযোগ বেড়েছে, তা পণ্য ও সেবা স্থানান্তরে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তবে এর সুফল সবার কাছে সমভাবে পৌঁছায়নি। বিশ্বায়ন থেকে যাতে অধিকসংখ্যক মানুষ সুফল পেতে পারে, এ জন্য বিনিয়োগ নীতি সময় উপযোগী করার পরামর্শ দেন তিনি।
আঙ্কটার্ডের ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৮–এর উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১৭ সালে বৈশ্বিক এফডিআই ২৩ শতাংশ কমেছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ২০১৬ সালে এফডিআই ১০ শতাংশ কমার পর আর পুনরুদ্ধার হয়নি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গত বছরে এফডিআই ১৭ শতাংশ কমেছিল। গত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সঠিক ও ন্যায়সংগত করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এলডিসি থেকে সুষ্ঠুভাবে উত্তরণের জন্য একটি যৌক্তিক সময় পর্যন্ত আবিষ্কারভিত্তিক ব্যবস্থা রেখে আমাদের সহায়তা করার প্রয়োজন। আমাদের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা এবং টিআরআইপি চুক্তির ৬৬.২ ও ৬৭ ধারার আলোকে বেসরকারি এফডিআই থেকে প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধি আবশ্যক।’
উন্মুক্ত আলোচনায় এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল ও অনুধাবনযোগ্য কাঠামো গঠনের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এসব ও অনুরূপ অন্যান্য পদক্ষেপ এলডিসিতে আরও বেশি এফডিআই প্রবাহ নিশ্চিত করবে, যা ২০৩১ সাল নাগাদ এসডিজি বাস্তবায়নে ব্যাপক সহায়তা দেবে।
প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নৃশংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা ও দীর্ঘদিন এখানে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, এ বিষয়টি দেশের অর্থনীতি ও সমাজে ব্যাপক ক্ষতি করছে।
বিশ্ব বিনিয়োগ ফোরাম (ডব্লিউআইএফ) হচ্ছে একটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিবার্ষিক বহুমুখী অংশীজন সমাবেশ, যেখানে বিশ্বের বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে আলোচনা ও কার্যক্রম–সংক্রান্ত মতবিনিময়ের সুযোগ থাকে। এখানে আন্তর্জাতিকীকরণ ও শিল্পায়নের নতুন যুগে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ও প্রাধান্য পাবে। এর লক্ষ্য হচ্ছে ‘ইনভেস্টমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে বিতর্ক ও আলোচনা করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধি, যা টেকসই ও সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
Leave a Reply