বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ অপরাহ্ন
মানুষের অন্তর দ্বারা ঈমানের যে কাজগুলো সম্পন্ন হয় সে কাজের সঙ্গে ঈমানের সম্পর্ক স্পষ্টভাবে জড়িত। আল্লাহকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসা এ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আল্লাহকে ভালোবাসার অর্থই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অন্য সব কিছুর সন্তুষ্টির ওপর প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহ তাআলাকে এরূপ ভালোবাসা বান্দার জন্য ওয়াজিব বা আবশ্যক।
আর মহব্বতের সর্বনিম্ন স্তর হলো কুফরির ওপর ঈমানকে প্রাধান্য দেয়া। ন্যূনতম এ ঈমান প্রাধান্য না দিলে মানুষ মুমিনই থাকে না।
আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসার কিছু ধরন রয়েছে। ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে এ ভালোবাসায় তারতম্য রয়েছে। এর মধ্যে এক ধরনের ভালোবাসা হলো মহব্বতে আকলি বা বুদ্ধিজাত ভালোবাসা। অন্যটি হলো মহব্বতে ত্বাবয়ী বা স্বভাবজাত ভালোবাসা।
> মহব্বতে আকলি বা বুদ্ধিজাত ভালোবাসা
আল্লাহর বিধানকে অন্য সব বিধানের ওপর প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহর বিধান যে পর্যায়ের হবে, তাকে সে পর্যায়ে ভালোবাসা।
– আল্লাহর হুকুম যদি ফরজ পর্যায়ের হয় তবে তাকে ফরজের মর্যাদা অনুযায়ী ভালোবাসতে হবে।
– আল্লাহর হুকুম পালন যদি ওয়াজিব হয় তবে সে কাজকে ওয়াজিব পর্যায়ে ভালোবাসতে হবে।
– কোনো হুকুম পালন করা যদি মোস্তাহাব পর্যায়ের হয় তবে তাকে মোস্তাহাব পর্যায়ে ভালোবাসা।
> মহব্বতে ত্বাবয়ী বা স্বভাবজাত ভালোবাসা
স্বভাবজাত ভালোবাসা হবে এমন যে, আল্লাহর সঙ্গে প্রাণের টান হয়ে যাওয়া। তাঁর কোনো নির্দেশের কথা শুনতে তা মানার জন্য যদি মানুষের মন উদ্বেল বা অস্থির হয়ে ওঠে তবে বুঝতে হবে এ হলো আল্লাহর প্রতি মহব্বতে ত্বাবয়ী বা স্বভাবজাত ভালোবাসা।
মহব্বতে ত্বাবয়ী বা স্বভাবজাত ভালোবাসায় মানুষ আল্লাহর কোনো বিধান শোনার সঙ্গে সঙ্গে তা পালনে পেরেশান হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁর নাফরমানিমূলক কাজ ছেড়ে শুধু তাঁরই আনুগত্যে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়।
এ উভয় ভালোবাসার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের ভালোবাসা মানুষের ইখতিয়ারাধীন। প্রথম প্রকারের ভালোবাসা মানুষের মাঝে সৃষ্টি হলে ধীরে ধীরে মানুষ দ্বিতীয় পর্যায়ের ভালোসার দিকে এগুতে থাকে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত ধীরে ধীরে আল্লাহর মহব্বত বৃদ্ধি করা। তাঁর মহব্বত বাড়াতে প্রিয়নবির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও অনুকরণের পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার জিকিরে নিজেকে নিয়োজিত করা। আর বেশি বেশি আল্লাহর মহব্বত লাভের দোয়া করা।
হাদিসে পাকে এসেছে, আল্লাহর নবি হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম আল্লাহর মহব্বত বৃদ্ধিতে সবসময় একটি দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। প্রিয়নবি তা বর্ণনা করেন-
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَ حُبَّ مَنْ يُّحِبُّكَ وَ الْعَمَلَ الَّذِىْ يَبْلُغُنِىْ حُبَّكَ
اَللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ اَحَبَّ اِلَىَّ مِنْ نَفْسِىْ وَ اَهْلِىْ وَ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুব্বাকা ওয়অ হুব্বা মাইঁ ইউহিব্বুকা ওয়াল আমালাল্লাজি ইয়াবলুগুনি হুব্বাকা আল্লাহুম্মাযআল হুব্বাকা আহাব্বা ইলাইয়্যা মিন নাফসি ওয়া আহলি ওয়া মিনাল মায়িল বারিদি।’ (মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ভালোবাসা লাভের আহ্বান করছি। তোমার সঙ্গে যেন আমার ভালোবাসা হয়ে যায়। তোমাকে যারা ভালোবাসে তাদের সঙ্গেও যেন আমার ভালোবাসা হয়ে যায়। আর যে কাজে তুমি পছন্দ কর সে কাজের সঙ্গে অর্থাৎ তোমার হুকুম-আহকামের সঙ্গে যেন ভালোবাসা হয়ে যায়।
হে আল্লাহ! তোমার ভালোবাসা যেন আমার কাছে আমার নিজের চেয়েও বেশি হয়। আমার পরিবারকে যত বেশি ভালোবাসি তার চেয়েও যেন বেশি হয়। এমনকি ঠাণ্ডা পাণীয় থেকেও যেন তোমার ভালোবাসা আমার কাছে বেশি হয়।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আল্লাহ তাআলার মহব্বত বৃদ্ধিতে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। মুমিন মুসলমানের উচিত প্রতি কাজে মহান আল্লাহকে বেশি বেশি ভালোবাসা। আল্লাহর ভালোবাসা লাভে পয়গাম্বর দাউদ আলাইহিস সালাম ও প্রিয়নবির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পড়া দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার ভালোবাসা লাভের তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত দোয়াটি পড়ার মাধ্যমে তাঁর ভালোবাসা বৃদ্ধির তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর বিধানগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply