সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
মুশফিকুর রহিমের এই সাক্ষাৎকারটা একটু অন্যরকম হলো। ‘কিশোর আলো’র জন্য মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রোববার তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে এসেছে স্কুল পড়ুয়া চার শিক্ষার্থী। সাক্ষাৎকারটা দিয়ে মুশফিক বেশ মজাই পেলেন। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের প্রশ্ন ওঠে না, ক্রীড়া সাংবাদিকেরা এমন প্রশ্ন করেন না। খুদে ভক্তদের প্রশ্নগুলো হলো যেমন মজার, তেমনি বুদ্ধিদীপ্ত।
উইকেটকিপার যে একটি দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ হতে পারে, আধুনিক ক্রিকেটে সেটির সবচেয়ে বড় উদাহরণ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। আর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় উদাহরণ মুশফিক। অবশ্য তাঁর কিপিং নিয়ে নানা সময়ে নানা কথা হয়েছে। তবুও গ্লাভসের প্রতি মুশফিকের যে ভীষণ টান-ভালোবাসা, সেটি সব সময়ই দেখা যায়। সবশেষ এশিয়া কাপে যেমন দেখা গেল। পাঁজরে তীব্র ব্যথা নিয়েও তিনি উইকেটকিপিং করে গেলেন।
কিন্তু মুশফিক কেন উইকেটকিপিং এত ভালোবাসেন? তিনি উইকেটকিপারই বা হয়েছেন কেন? তিনি চাইলে শুধু ব্যাটসম্যান কিংবা অলরাউন্ডারও হতে পারতেন। মুশফিকের উইকেটকিপার হওয়ার পেছনে একটা গল্প আছে। সেই গল্পটা শোনালেন সে শারদীয় দুপুরে, ‘যখন ছোট ছিলাম, পাড়ায় পাড়ায় খেলতে যেতাম। একবার এমন একটা খেলায় খেলতে গিয়ে জানলাম, আমাদের নিয়মিত উইকেটকিপার চোটে পড়ায় খেলতে পারবে না। তার জায়গায় কে উইকেটকিপিং করবে, এটা নিয়ে যখন সবাই চিন্তায়, তখন আমি এগিয়ে এলাম। ভাবলাম করে দেখি। সেদিন দুটো ক্যাচ নিয়েছিলাম। ওখান থেকে উইকেটকিপিংয়ের শুরু। সেদিন উইকেটকিপিং করে খুব মজা পেলাম। ছোটবেলায় আমার চেয়ে আমার ব্যাট বড় ছিল! উইকেটকিপিংটা করতে পারতাম বলে আমাকে দলে নেওয়া হতো। আর বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর গুরুত্বের সঙ্গে উইকেটকিপিং শুরু করি। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হলে দলে অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করা যায়। দলে তাতে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এসব ভেবে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হওয়া।’
ব্রায়ান লারার ভীষণ ভক্ত বলে মুশফিক একটা সময় বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানও হতে চেয়েছেন। সেটি হওয়া হয়নি। তবে অনেক ইচ্ছে তাঁর পূরণ হয়েছে। মুশফিকের যেমন খুব ইচ্ছে হয় শ্রীলঙ্কাকে হারাতে। নিদাহাস ট্রফিতে অপরাজিত ৭২ কিংবা দুবাইয়ে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ১৪৪ রানের ইনিংস খেলে সেই ইচ্ছে পূরণ করেছেন! প্রশ্ন হতে পারে, মুশফিকের শ্রীলঙ্কাকে হারাতে ইচ্ছে হয় কেন? উত্তরটা দিতে গিয়ে বাংলাদেশের তারকা ব্যাটসম্যান লাজুক হাসেন, ‘টেস্টে ওরা একটা সময় আমাকে অনেক ভুগিয়েছে। কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও দিলশান আমাদের অনেক ভুগিয়েছে। সাঙ্গাকারা আমাদের বিপক্ষে দুই-তিনটা ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। একটা ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছে। আর সেই ব্যাটিং আমাকে দেখতে হয়েছে উইকেটকিপার হিসেবে! সে দিক দিয়ে একটা রাগ তো ছিলই। যদি সুযোগ পাই ওদের হারাবে বা এমন ভাবে ভোগাব, ফিরিয়ে দেওয়া আর কী! এখন সুযোগ পেলে চেষ্টা করি ওদের হারাতে। চেষ্টা করি ওদের বার্তা দিতে যে, দেখ তোমরা আমাদের যেভাবে ভুগিয়েছ, আজ সেভাবে তোমাদের ভোগাচ্ছি।’
এক যুগের ক্যারিয়ারে ৩২৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। স্মৃতিতে কোনো ম্যাচ ভীষণ উজ্জ্বল, কোনো ম্যাচ আবার ধূসর। তবে একটা ম্যাচ মুশফিক কিছুতেই ভুলতে পারেন না। যদি সুযোগ আসে, সেই ম্যাচটা আবার খেলতে চান মুশফিক, ‘যদি সুযোগ থাকত ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা আবার খেলতাম। আমাদের দরকার ছিল ২ রান। আমি আর রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাই আউট হয়ে যাওয়ায় সেটা হয়নি। ওই ম্যাচ আর ফিরে পাব না, তবে এমন পরিস্থিতি হয়তো আরও আসবে। এলে চেষ্টা করব চ্যালেঞ্জটা উতরে যেতে।’
বেঙ্গালুরুর ওই দুঃখগাথার পর বাংলাদেশ কত সাফল্যের গল্প লিখেছে, মুশফিকেরই কত বীরত্ব দেখা গেছে। তবু ক্ষতটা রয়েই গেছে। সে ক্ষতে যে সহজেই প্রলেপ পড়ার নয়!
Leave a Reply