সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন
মাত্র তিন দিন আগে শিশুটির জন্ম। মায়ের নিবিড় মমতায় বেড়ে ওঠে এমন শিশু। মাতৃকোল তার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। অথচ সেই মায়ের কারণেই দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হলো তাকে। অভিযোগ উঠেছে, ওই শিশুটিকে ছাদ থেকে ফেলে তার মা–ও লাফিয়ে পড়েন। এ ঘটনায় মা ও শিশু দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভবনে এ ঘটনা ঘটে। ওই মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভবনের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
পরিবার ও পুলিশ বলছে, প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে কলহের জের ধরে নবজাতক ছেলেসন্তানকে পাঁচতলার ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন মা।
মারা যাওয়া মায়ের নাম সীমা আখতার (২৫)। আখাউড়া উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়ার মেয়ে তিনি। স্বামী লেবাননপ্রবাসী মনির হোসেন। এক বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়।
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় সীমার। আজ সকালে সবার অলক্ষ্যে তিনি সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভবনের ছাদে গিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়েন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জেলা শহরের পুরোনো জেল রোড এলাকায় লাইফ কেয়ার অ্যান্ড শিশু জেনারেল হাসপাতালে প্রসবজনিত ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন সীমা। ওই দিন রাতেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর একটি ছেলেশিশুর জন্ম হয়। প্রসবের পর হাসপাতালের ৩০৩ নম্বর কক্ষে ছিলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আজ ছুটির দিন হওয়ায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনেক ভিড় ছিল। একজন মাকে নবজাতক সন্তান কোলে ছাদে যাওয়ার বিষয়টি কেউ খেয়ালও করেনি। তবে সীমার শিশুটিকে পাঁচতলা থেকে ফেলে দেওয়ার পর নিচে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন হতবাক হয়ে পড়েন। সীমার লাফিয়ে পড়ার প্রস্তুতি দেখে তাঁরা নিচ থেকে চিৎকার করে লাফ দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই লাফিয়ে পড়েন সীমা।
পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে সীমা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সীমা যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেটিও পাঁচতলার। তবে ওই হাসপাতালের নিচের দিকে বিদ্যুতের ঘন তার রয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে হাসপাতালের ভবনটি বাদ দিয়ে পাশের ডায়াগনস্টিক ভবনটিকে বেছে নিয়েছিলেন সীমা।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েছেন সীমার মা রেহেনা বেগম ওরফে ছেলন। মেয়ের সঙ্গে তিনি হাসপাতালেই ছিলেন। তিনি জানান, তরকারি গরম করতে তিনি বেরিয়েছিলেন। ফিরে এসে সীমাকে ও তাঁর সন্তানকে কক্ষে দেখতে পাননি। এদিক–সেদিক খুঁজেও পাননি। একটু পর মেয়ে ও নাতির মৃত্যুর খবর পান।
সন্তান জন্মের পর শ্বশুরবাড়ির কেউ দেখতে না আসা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সীমার ঝগড়া হয়। তাঁর স্বামীর বাড়ি সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ঘাটিয়ারা এলাকায়। তিনি স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন।
৩০৩ নম্বর কক্ষে থাকা একজন বলেন, রাতে মুঠোফোনে স্বামীর সঙ্গে সীমাকে ঝগড়া করতে শুনেছেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আজ তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। তাঁদের আর্থিক কোনো সমস্যা ছিল না।
লাশ মর্গে রাখা আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র : প্রথম আলো
Leave a Reply