সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
মৃত্যু মানুষের সব রঙিন পরিচয়, কাজ ও ভালো-মন্দের লাভ/ক্ষতি মুছে দেয়। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সব আমল কি বন্ধ হয়ে যায়? না, মানুষের সব আমল সাওয়াব কিংবা ক্ষতি বন্ধ হয় না। মানুষ মৃত্যুর আগে যে কাজ করে যায়, তার ভালো-মন্দ আমলনামায় পৌছতে থাকে।
হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
‘মৃত্যুর পরও মানুষের দুই ধরণের আমল অব্যাহত থাকে। তার একটি হলো- মৃতের এমন আমল যা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে। আর দ্বিতীয়টি হলো- এমন আমল, যা মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতরা করে থাকে।’
আবার মৃতব্যক্তি যদি জীবিত থাকাকালীন সময়ে এ সব কাজের উল্টো করে থাকে। অর্থাৎ ভালো কাজের পরিবর্তে এমন মন্দ কাজ করে যায় যে, তার মৃত্যুর পরও সে কাজ চলতে থাকে। আবার এমন ওয়ারিশ রেখে যায়, যারা তার শিক্ষা অনুযায়ী মন্দ কাজে ধাবিত হয়, তবে সেসব মন্দ কাজ ও মন্দ লোকদের করা গোনাহ সে ব্যক্তির আমলনামায় যোগ হতে থাকে।
মৃতব্যক্তির আমলনামায় যেসব সাদকা যোগ হয়
– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবি থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না-
> সদকায়ে জারিয়া
> যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবে এবং
> এমন দীনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। (মুসলিম শরিফ)
– মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের দোয়া
মৃতব্যক্তি যদি এমন কোনো ওয়ারিশ রেখে যায়, যারা মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করে থাকে। আবার অনেকে সব মুসলমানের জন্য দোয়া করে থাকে। আর তাহলো-
> মুসলমানদের মাগফেরাত কামনা
মৃত বাবা-মার জন্য দোয়া করার সময় সব মুমিনদের জন্যও দোয়া করতে কুরআন ও হাদিসের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছেন, তাদেরকে ক্ষমা কর। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রেখ না’।
অন্য আয়াতে এসেছে-
‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছে’। (সূরা বনি ইসরাঈল)
> মৃত ব্যক্তির জন্য দান-সদকা
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা হঠাৎ মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি কোনো ওসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে দান সদকা করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে দান সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কেউ যদি দান-সাদকা করে তাহলে সে তার সওয়াব পাবেন এবং এর দ্বারা তিনি উপকৃত হবেন।
> মৃতব্যক্তির জন্য রোজা পালন
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এই অবস্থায় যে, তার ওপর রোজা ফরজ ছিল তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশগণ রোজা রাখবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কেউ যদি রোজা রাখে তাহলে মৃতব্যক্তি তার সওয়াব পাবেন এবং এর দ্বারা তিনি উপকৃত হবেন।
> মৃতব্যক্তির জন্য হজ্জ আদায়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে এভাবে তালবিয়া পাঠ করতে শুনলেন, আমার ‘শুবরুমা’র পক্ষ থেকে এ হজ্জ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শুবরুমা’ কে? লোকটি বলল, সে আমার ভাই, অথবা বলল সে আমার আত্মীয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার নিজের হজ্জ আদায় করেছ? সে বলল না, করিনি। (তখন প্রিয়নবি বললেন) আগে তোমার নিজের হজ্জ কর। তারপর শুবরুমার হজ্জ কর।
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, নিজের হজ আদায় করার পর মৃত ব্যক্তির নামে হজ আদায় করলে সে হজের সাওয়াব মৃতব্যক্তি পাবে এবং হজ দ্বারা মৃতব্যক্তি উপকৃত হবে।
> মৃতব্যক্তির জন্য কুরবানি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দুম্বা কুরবানি করেন, জবাই করার সময় বললেন, এটা আমার উম্মতের ঐ সব লোকদের পক্ষ থেকে যারা কুরবানি করতে পারেনি। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা জায়েয। সুতরাং কেউ যদি নিজের কুরবানির সাওয়াবে তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও মৃত ব্যক্তির নিয়ত করে নেয়, তাহলে সেসব আত্মীয়-স্বজন কুরবানির সাওয়াব পেয়ে যাবে।
তাইতো হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবির হাদিস পেশ করেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের ওপর অবিচল ও দৃঢ় থাকার দোয়া কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।’
মনে রাখতে হবে
মানুষের মৃত্যুর পরও তাদের আমলনামায় সাওয়াব ও প্রতিদান যোগ হতে থাকে। যা দ্বারা মৃতব্যক্তি উপকৃত হবে। আর মৃতব্যক্তির জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক ওয়ারিশের দান-সাদকা, রোজা পালন, হজ পালন, কুরবানি আদায়সহ কল্যাণের কাজ করা উচিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃতব্যক্তির জন্য কল্যাণকর কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply