সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চাটখিলে খালে মিললো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া ৬১২ বুলেট মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাকে আড়াল করার জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত টেকনাফের করিম মেম্বার চাটখিলে ব্যবসায়িকে অপহরন-চাঁদা দাবি -থানায় মামলা চাটখিলের সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ আওয়ামীলীগের ২৯ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা অপারেশন ক্লিন লীগ’ ঘোষণার দাবি গণঅধিকার পরিষদ নেতার বন্যা দুর্গতদের মাঝে এন আর বি ব্যাংকের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চাটখিলে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র লীগের হামলার অভিযোগ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় পুলিশের এস আই ক্লোজড সোনাইমুড়ীতে মোটরসাইকেল চুরি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে গুলি করে হত্যা
ফেসবুকেই সর্বনাশ সৌম্যর

ফেসবুকেই সর্বনাশ সৌম্যর

মুরুব্বিদের কথা তো শোনেন না, দেশ-বিদেশের এত এত জ্ঞানী-বিজ্ঞানীদের কথাও মনে হয় বাতেলা। অন্তত সৌম্য সরকারের কথাটা তো শুনুন। জীবনের ব্যর্থতা, সমস্ত নেতিবাচকতা মুছে ফেলতে ফেসবুক ব্যবহার ছাড়ুন। তা না পারলে অন্তত কমিয়ে দিন। আর তাও যদি না পারেন, তাহলে তো বুঝতেই পারছেন, ফেসবুক আপনার কাঁধে নেশা হয়ে চেপে বসেছে সিন্দবাদের বুড়োর মতো। মুক্তির উপায়? সাংবাদিকদের কথাও তো শুনবেন না, অন্তত সৌম্যর কথা শুনুন।

তা কী বলছেন সৌম্য? কিছুদিন ধরে যে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পাচ্ছেন, এর অন্যতম কারণ হিসেবে সৌম্য বললেন ফেসবুকের কথা। আরও স্পষ্ট করে বললে ফেসবুক ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখার কথা। মসলামাখা চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে এমন অনলাইন পোর্টালগুলো যে ক্ষতি করছিল, সেটাও বললেন। ফলে দায় সাংবাদিকদেরও আছে সৌম্যের পথ হারানোর পেছনে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে, প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ফিরেই করলেন সেঞ্চুরি। এর মধ্যে কী এমন কাজ করেছেন, যেটা সৌম্যকে ফেরাতে সাহায্য করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবেই সৌম্য বললেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, বাইরের কথা বেশি শুনতাম। ফেসবুকটা যখন ব্যবহার করতাম, তখন নেতিবাচক মন্তব্যগুলো আসত অনেক, যা মাথায় গেঁথে যেত। মানুষ ইতিবাচক জিনিসটা লেখেও না। এমন এক-একটা হেডলাইন আসত (ফেসবুকে শেয়ার করা), যেন আমি সবই খারাপ করেছি। আর আমরা বাংলাদেশিরা হেডলাইনটাই বেশি পড়ি, ভেতরে কী আছে পড়ে দেখি না। পরে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করার কথা ভেবেছি। নেতিবাচক জিনিসগুলো কম নেব, মানুষের সঙ্গে কথা কম বলব। শুধু ইতিবাচক জিনিস নিয়েই বেশি ভাবার চেষ্টা করেছি। অনুশীলনও কম করতাম তখন, যখন খারাপ যায় তখন সবই খারাপ যায়, ভালো কিছু করলেও দেখা যায় খারাপই হচ্ছে। একটু বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতাম সেই সময়ে।’

বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, সেটা কিন্তু ওই মেসেঞ্জারে নয়। সশরীরে। না হলে তো এখন আবার অনেকে বলেন, কে বলে আমি ‘আনসোশ্যাল’? আমি তো সারা দিন ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ই ব্যবহার করি।

সৌম্যর অবশ্য চাইলেও খুব বেশি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। আক্ষরিক অর্থেই যে সৌম্য ছিলেন দৌড়ের ওপর। খুলনায় ম্যাচ খেলছিলেন, জানলেন ছুটে যেতে হবে আরব আমিরাতে। গেলেন, আবার ফিরে এসে যোগ দিলেন জাতীয় লিগে। করলেন সেঞ্চুরি। ৫ উইকেটও পেলেন। আবার জানলেন, এবার খেলতে হবে বিকেএসপিতে, জিম্বাবুয়ের একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের অধিনায়ক তিনি। ফের ছুট। সেখানেও করলেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি।

তাতেও নির্বাচকদের মন গলল না। ওয়ানডে সিরিজের দলে জায়গা না পেয়ে আবার ফিরলেন জাতীয় লিগে। খুলনায় খেলতে খেলতেই এবার ম্যাচ শেষ না করে খুলনা থেকে ঢাকা হয়ে উড়ে আসতে হলো চট্টগ্রামে। এই কদিনের গায়ের জার্সি, ম্যাচে বলের রং, ফরম্যাটেই শুধু বদলায়নি, বদলেছে শহরও। কালই আবার যেতে হবে বরিশাল।

এমন ঘুর-ঘুরান্তি ইবনে বতুতারও ভালো লাগত না নির্ঘাত! এভাবে উড়ে এসে এক দিনের অনুশীলনে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে, খারাপ খেললেই আবার হয়তো বাদ পড়বেন, এমন অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে সৌম্য ব্যাট করতে নেমেছেন…দল যখন ইনিংসের প্রথম বলে শুধু উইকেটই হারায়নি, হারিয়েছে সবেধন রিভিউটাও। সেখানে কী এক বিস্ফোরক ইনিংস খেললেন! ডাউন দ্য উইকেটে এসে তেড়েফুঁড়ে মেরেছেন, দুর্দান্ত কাভার ড্রাইভও ছিল…তবু নিজের সেরা ছন্দে থাকা সৌম্যর ইনিংস এমনই মায়াঞ্জন বুলিয়ে দেয়, একে ঠিক সবকিছুর পাল্টা জবাব ধরনের রুক্ষ শব্দ দিয়ে প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে না! রাজার শাসনে তো শুধু নির্মমতাই থাকে না, থাকে মমতাও।

সৌম্য নিজেও বলছেন, এত কিছু ভাবেননি, ‘আজ আসলেই আমার মাথায় চাপ বা ও রকম কোনো কিছু ছিল না। আমি চিন্তা করেছি, আজ যদি খারাপ খেলি, হয়তো খারাপই হবে। খারাপই যাচ্ছিল সময়টা (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে), আজও যেতে পারত। ওই জিনিস নিয়ে ভাবিনি। বরং মনে হয়েছে, খারাপ যখন যাচ্ছে, আরেকটা ম্যাচ খারাপ গেলে যাবে, এ-ই তো। সমস্যা নেই। আরও কিছু কথা বাড়বে, সমস্যা কী! চিন্তা করেছি, নিজে নিজের খেলাটা খেলি। ভালো হলে বাহবা দেবে, খারাপ হলে সবাই খারাপ বলবে।’

আর সেই খারাপ বলে বলে কান ফাটিয়েই–বা লাভ কী! ঘরে বসে, কখনো কমোডের ওপর ক্রিয়াকর্ম করতে করতে দেশের যেকোনো ব্যক্তিত্বকে গালি দেওয়ার অনায়াস এক হাতিয়ার যে ফেসবুক, সেটাই তো সৌম্য ব্যবহার করছেন না! গতকালই গালিতে ভাসিয়ে দেওয়া লোকগুলো ‘কই, সৌম্য হেটাররা এখন কোথায়’ লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ব্যস্ত, সেটা তাদের পেশা; সৌম্যর পেশা হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। বাঙালি তার চরিত্র অনুযায়ী আবার শুরু করেছে সৌম্য–বন্দনা। প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছে। তালি এবং গালি বিতরণে যে সবাই বেশ অকৃপণ।

ভয় একটাই, ‘দেখি তো, কে কে প্রশংসা করে কী লিখছে’ দেখার লোভে সৌম্য না আবার ফেসবুকটা চালু করে বসেন!

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2018 dailychatkhilkhobor.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com